বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কমছে লবণের চাষযোগ্য জমি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কমছে লবণের চাষযোগ্য জমি

দিন দিন কমছে লবণ চাষযোগ্য জমির পরিমাণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লবণের চাহিদার পরিমাণ বাড়লেও কয়েক বছরের ব্যবধানে দেশে লবণ চাষযোগ্য জমি কমেছে কয়েক হাজার। তবে চাষযোগ্য জমি কমলেও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বেড়েছে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে লবণ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। এ বছর ওই রেকর্ড ভঙ্গ করার প্রত্যাশা করছে লবণ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্র্যালয় বিসিক, কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মোহাম্মদ জাফর ইকবাল ভুইয়া বলেন, ‘দেশে প্রতিনিয়ত লবণের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে বিসিক। এ জন্য লবণ চাষিদের উন্নত পদ্ধতিতে লবণ চাষ করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আগাম চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লবণ উৎপাদনে রেকর্ড হবে আশা করছি।’

জানা গেছে, দেশের উৎপাদিত লবণের প্রায় সব আসে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম থেকে। যার মধ্যে কক্সবাজারে আটটি উপজেলার মধ্যে উখিয়া ছাড়া সাতটি উপজেলাই লবণ চাষের উপযোগী। চট্টগ্রামের একমাত্র বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র-তীরবর্তী জমিতে লবণ চাষ হয়। কিন্তু কয়েক বছর আগে মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ, বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ একাধিক ভারী শিল্পকারখানা স্থাপনের কারণে লবণ চাষের জমির পরিমাণ কমে আসছে। এ ছাড়া উপকূল ভাঙন ও অন্যান্য কারণে লবণ চাষের উপযোগী জমির পরিমাণ কমেছে কয়েক হাজার একর। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে চাষ উপযোগী জমির পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৭৫৪ একর। এরপর থেকে প্রত্যেক বছরই কমছে লবণ চাষের ভূমি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৯৭০ একরে। যদিও এরপর কিছু বেড়েছে জমির পরিমাণ। ২০২১-২২ অর্থবছরে চাষ হয় ৬৩ হাজার ২৯১ একরে। তবে চাষের জমি কমে গেলেও চাষে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং আগাম চাষের কারণে বেড়েছে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ। লবণ চাষের জমি বাড়াতে ২০১৯ সালের শুরুতে উদ্যোগ নেয় বিসিক। তারা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় পরিবেশবান্ধব লবণ শিল্পপার্ক স্থাপনে ২৫ হাজার একর জমি চেয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে চিঠিও দেয় বিসিক কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিসিকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা সরেজমিন সন্দ্বীপ শিল্পপার্কের জমির বিষয়ে তদারকিও করেন। তবে অপ্রতুল জমি ও জেগে ওঠা চর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়ার সরকারি পরিকল্পনা থাকায় বিসিকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। ফলে বাংলাদেশে লবণ চাষের বিকল্প কোনো জমি খুঁজে পাচ্ছে না বিসিক কর্তৃপক্ষ।

বিসিকের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৩.৩৫ লাখ মে. টন লবণের চাহিদার বিপরীতে ৬৩ হাজার ২৯১ একক ভূমিতে লবণ উৎপাদন হয় ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৩৬ মে. টন। যা দেশের ইতিহাসে লবণ উৎপাদনের রেকর্ড। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৪ হাজার ৬৫৪ একক ভূমিতে লবণ উৎপাদন হয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৮২০ মে. টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে লবণ উৎপাদন হয় ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ মে. টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ২৪ হাজার মে. টন।  ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৯৩ হাজার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার মে. টন এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার মে. টন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর