বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রসার ঘটছে দেশের বেকারি শিল্পে

হাতের স্পর্শ ছাড়াই তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিকমানের কেক

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাতের স্পর্শ ছাড়াই তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিকমানের কেক

হোক রাস্তায় কিংবা কর্মক্ষেত্রে; দিনের একটা দীর্ঘ সময় ঢাকা শহরের কর্মজীবী মানুষ বাসার বাইরে সময় কাটায়। প্রতিবেদক হিসেবে রাস্তাতেই সবচেয়ে বেশি সময় কাটে আমার। সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে খুচরো খিদে পেয়ে গেলে চটজলদি একটা কিছু খেয়ে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু অধিকাংশ সময় স্বাস্থ্যকর কিছু পাই না।

গত সপ্তাহে রাস্তার পাশে এক চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে খেয়াল করলাম, দোকানে বেশ কিছু আকর্ষণীয় কেকের প্যাকেট ঝুলে আছে। দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম কেকটির গুণগত মান নিয়ে। দোকানদার উত্তর দিলেন, “ফানটাস্টিক কেক; আকিজ বেকার্স বাজারে নতুন ছাড়ছে। আকিজ বেকার্সের জিনিস এখন পর্যন্ত খারাপ পাই নাই। লোকজন আইসা তো বারবার এই ফানটাস্টিক কেকটাই খুঁজতাছে”।

হাতে নিয়ে দেখলাম প্যাকেটটিতে লেখা আছে ফানটাস্টিক কেক। প্যাকেট খুলে কেক মুখে দিতেই যে স্বাদ পেলাম, তা এক কথায় ফ্যান্টাস্টিক! মনে মনে ভাবলাম, ফ্যান্টাস্টিক স্বাদের কেকের নাম ‘ফানটাস্টিক’ই তো হবে! কেকের স্বাদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত আকর্ষণীয় প্যাকেজিং- দুটিই বেশ মজার।

চা সহযোগে ফানটাস্টিক কেক খেতে খেতে মনে হলো, প্রতিদিন ঢাকা শহরে যে বিপুল পরিমাণ লোক রাস্তায় ছোটাছুটির মধ্যে থাকে, তার মধ্যে অনেকেই খুচরো খিদা মেটানোর জন্য আমার মতো চটজলদি কিছু খেয়ে নেন। সেই মোতাবেক হিসাব করলে দেখা যাবে, সারা দেশেই প্যাকেটজাত কেকের এক বিশাল ভোক্তাগোষ্ঠী আছে। খুচরো খিদে মেটানোর জন্য ইতোমধ্যেই প্যাকেটজাত কেক বেশ জনপ্রিয়। জনপ্রিয় হলেই ভোক্তা হিসেবে যে প্রশ্নটি প্রথম মাথায় আসে সেটি হলো, পণ্যটি স্বাস্থ্যসম্মত তো?

খোঁজ নিয়ে দেখলাম, প্রায় অধিকাংশ দোকানেই ‘ফানটাস্টিক’ কেকের বেশ কদর। আগ্রহ জন্মাল আকিজ বেকার্স লিমিটেডের বিষয়ে। বাজারে ছাড়ার অল্প দিনের মধ্যে কীভাবে ভোক্তাপ্রিয় হয়ে ওঠে কোন পণ্য- খতিয়ে দেখতে ইচ্ছা হলো।

১২ নভেম্বর ২০২২ আকিজ বেকার্স লিমিটেড ফানটাস্টিক কেক আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে ছাড়ে। এর আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে এই ব্র্যান্ডের কেক বাজারে ছিল। জানা গেল, বাজারে পণ্য ছাড়ার আগে ভোক্তার স্বাদ ও চাহিদা যাচাই করতেই আকিজ বেকার্স ‘ফানটাস্টিক কেক’ অনানুষ্ঠানিকভাবে বাজারে ছেড়ে রেখেছিল।

১২ নভেম্বর ২০২২ আকিজ বেকার্স লিমিটেডের ফানটাস্টিক কেক আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এর আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে এই ব্র্যান্ডের কেক বাজারে ছিল। জানা গেল, বাজারে পণ্য ছাড়ার আগে ভোক্তার স্বাদ ও চাহিদা যাচাই করতেই আকিজ বেকার্স ‘ফানটাস্টিক কেক’ অনানুষ্ঠানিকভাবে বাজারে ছেড়ে রেখেছিল। আকিজ বেকার্স লিমিটেডের কারখানা পরিদর্শন করতে গিয়ে তথ্যটি জানলাম তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ জামিল উদ্দিনের কাছ থেকে।

তাঁর কাছ থেকে আরও জানলাম, আকিজ বেকার্স লিমিটেড বেকারি প্রকল্পে মোট ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তাদের প্রথম ব্র্যান্ড বেকম্যান’স বিস্কিট এবং বাজারের শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছাতে তারা ‘ফানটাস্টিক’ ব্র্যান্ডের আওতাধীন বিভিন্ন পণ্য বাজারে ছাড়া শুরু করে। দেশের বাজারে বেকারি পণ্য তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি নতুন কারখানা স্থাপন করেছে। কারখানাটি পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখলাম, তারা বিস্কিট, কেক উৎপাদন ও প্যাকেটজাত করার জন্য ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত মেশিন স্থাপন করেছেন। কোনো প্রকার হাতের স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফানটাস্টিক কেকসহ সব পণ্য উৎপাদন করে যাচ্ছে তারা।

বেকারি খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, দেশে বছরে বিস্কিটের বাজার ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা, যেখানে দেশের খ্যাতনামা কোম্পানিগুলোর বড় অংশগ্রহণ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিল্প গবেষণা সংস্থা আইবিআইএস ওয়ার্ল্ডের তথ্য মতে, বাংলাদেশের মাথাপিছু বিস্কিটের চাহিদা ১ কেজি ৮০০ গ্রাম। যেখানে শ্রীলঙ্কায় ৪ কেজি, ভারতে ২ কেজি ২০০ গ্রাম এবং পাকিস্তানে ২ কেজি ৫০০ গ্রাম। এ খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার টন বিস্কিট উৎপাদন হয় এবং দেশে বিস্কিটের চাহিদা বছরে প্রায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পণ্যের মান কীভাবে নিশ্চিত করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ জামিল উদ্দিনের কাছ থেকে জানা গেল, মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে তারা সবসময় সেরা মানের কাঁচামাল ব্যবহার করেন। কারখানা পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টজনদের কাছ থেকে জানতে পারলাম, তারা গ্রেড-১ ফ্লাওয়ার, চিনি, সেরা মানের আমদানিকৃত ফ্লেভার, ফুল ক্রিম ও স্কিমড মিল্ক পাউডার এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা রিয়েল ক্রিম ব্যবহার করছেন, যেখানে অন্যরা ব্যবহার করে ডালডা। এসব কারণে অতি অল্প সময়ে আকিজ বেকার্সের ফানটাস্টিক কেক বাজারের দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে। বিস্কিট এবং কেক তৈরির পাশাপাশি, আকিজ বেকার্স লিমিটেড ভোক্তাদের জন্য ব্রেড, বান এবং ওয়েফারও তৈরি করে আসছে।

এ বিষয়ে আকিজ বেকার্স লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার শফিকুল ইসলাম তুষার বলেন, আমাদের ফানটাস্টিক কেক বাজারে আসার খুব কম সময়ের মধ্যেই ভোক্তাদের মন জয় করেছে। এটি আমাদের জন্য একটি আনন্দের ও বিস্ময়কর ছিল। কারণ আমরা এত কম সময়ে এত বড় প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করিনি। বাজার ঘুরে দেখা যায় আকিজ বেকার্স লিমিটেডের পণ্যের মানের কারণে খুব দ্রুত গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

জনাব তুষারের কাছ থেকে আরও জানা গেল, পণ্যের গুণগত ও স্বাস্থ্যগত মান অটুট রাখা হয়েছে বলেই অল্প দিনের মধ্যে ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে ফানটাস্টিক কেকসহ আকিজ বেকার্স লিমিটেডের অন্যান্য পণ্য। বিপণন কৌশলের অংশ হিসেবে তারা ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টিও মাথায় রেখে দাম নির্ধারণ করেছেন। স্বাদ যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ভোক্তাদের মধ্যে জরিপ চালিয়েছেন। এ ছাড়াও যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তারা করেছেন সেটি হলো, দেশের প্রতিটি কোণায় পণ্যের সার্বক্ষণিক সরবরাহ নিশ্চিত করা।

আকিজ বেকার্স লিমিটেড রপ্তানি বাজারের ওপরও নজর রেখেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা। মালয়েশিয়ায় তাদের বেকারি পণ্যের প্রথম চালান রপ্তানি করেছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশি বিস্কিটের চাহিদা রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ভারত, সিঙ্গাপুর, নেপাল, ওমান, কাতার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও যেহেতু আকিজ বেকার্স লিমিটেডের ভোক্তা শ্রেণির অংশ তাই তাদের পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন করছে দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ কর্তৃপক্ষ। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিষয়ে ভোক্তা মহলে কীভাবে আস্থা তৈরি হয় তা বুঝতে পারলাম আকিজ বেকার্স লিমিটেডের কারখানা পরিদর্শন করতে গিয়ে। ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ভোক্তার চাহিদা পূরণে কাজ করে আসা আকিজ গ্রুপের এই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করার পাশাপাশি করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অবদান রেখেছে। সিলেটে বন্যা দুর্গতদের জন্য আকিজ বেকার্স লিমিটেড বিনামূল্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং ওষুধ সরবরাহ করেছে। করোনা আক্রান্তদের সহজে পরিবহন করার জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করেছে। করোনাকালীন দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা মেশিন সরবরাহ করেছে।  একটি স্বাস্থ্যসম্মত কেকের পেছনে যে নিষ্ঠার গল্পটি আছে; ফানটাস্টিক কেক না খেলে, তা আমার অজানাই থেকে যেত!

সর্বশেষ খবর