বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সমন্বয়হীনতা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পায়নে বড় বাধা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

সমন্বয়হীনতা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পায়নে বড় বাধা

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও সমন্বয়হীনতায় এখনো শিল্পায়নের সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমায় বাজারজাতকরণে কৃষি ও মৎস্য খাতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। কম সময়ে উৎপাদিত পণ্য সড়কপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির সুবিধা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিও বেড়েছে।

তবে পদ্মা সেতু কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পায়নের যে বিপুল সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল তা পূরণ হয়নি। দীর্ঘদিনেও এখানে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কাক্সিক্ষত বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক জোন গড়ে ওঠেনি। জানা যায়, শিল্পনগরী খুলনায় এক সময় ২৬টি ছোট-বড় শিল্পকারখানা ছিল। যেখানে দুই লাখের অধিক মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। ধীরে ধীরে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন মানুষ বিকল্প পেশায় চলে গেছেন। এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আবারও চালু হলে অর্থনীতি আমূল বদলে যাবে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, সমন্বয়হীনতায় শিল্পায়নের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়নি। এখানে পাটশিল্পকে ঘিরে বহুমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ উদ্যোগ নেননি। নতুন কোনো গার্মেন্ট বা সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটনশিল্প গড়ে ওঠেনি। এ ছাড়া এখানে কী কী সম্ভাবনা আছে তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক বা তাদের আকৃষ্ট করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কয়েক দফা বৈঠক ও জমি পরিদর্শন করা হলেও রূপসা, তেরোখাদা বা বটিয়াঘাটায় অর্থনৈতিক জোন গড়ে ওঠেনি। এমনকি শিল্পপতিদের নিয়েও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়ে উৎসাহিত করতে আলাদা কোনো বৈঠক বা জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাও চোখে পড়ে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষি, মৎস্য, পর্যটনশিল্প, বন্ধ হওয়া কলকারখানায় নতুন বিনিয়োগের জন্য কানেকটিভিটি একটা বড় সমস্যা ছিল। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সেই সংকট কেটেছে। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য অবকাঠামো, গ্যাস বা বিমানবন্দর তৈরি করা যায়নি। ফলে এই অঞ্চলে প্রত্যাশিত বিনিয়োগও বাড়ছে না। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সংগঠনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

তবে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এসব অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা এই অঞ্চলে জমি কিনছেন। যখনই তারা শিল্প চালু করবেন তখনই কর্মসংস্থান বাড়বে।

দিনে দিনে পদ্মা সেতুর সুফল আমরা পেতে থাকব। এই শিল্পায়ন এক দিনে নয়, সৃষ্টি হতে কিছুটা সময় লাগবে। অপেক্ষা করতে হবে এই সুফল পাওয়ার জন্য। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা থাকবে না। সেই সঙ্গে খানজাহান আলী বিমানবন্দর চালু হলে মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি ও সুন্দরবনসহ সব ধরনের পর্যটনশিল্প উপকৃত হবে, ব্যাপক সুফল বয়ে আনবে।

 

সর্বশেষ খবর