বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
বায়োটেকনোলজি বাড়াচ্ছে উৎপাদন

বাড়ছে পুষ্টিসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন

মানিক মুনতাসির

বিশ্বের প্রথম জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাতসহ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এখন পর্যন্ত জিংকসমৃদ্ধ ধানের সাতটি জাত উদ্ভাবন করেছে। ২০১৩ সালে ব্রির বিজ্ঞানীরা বিশ্বের সর্বপ্রথম জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত ব্রি ধান৬২ উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে ব্রি আরও ছয়টি জিংকসমৃদ্ধ জাত যেমন- ব্রি ধান৬৪, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮৪, ব্রি ধান১০০ (বঙ্গবন্ধু ধান১০০) এবং ব্রি ধান১০২ অবমুক্ত করে। ভাত বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হওয়ায় জিংকসমৃদ্ধ ধানের মাধ্যমে জিংকের অভাব পূরণ একটি টেকসই সমাধান। জিংকসমৃদ্ধ ধানের ভাত খেয়ে জিংকের দৈনিক চাহিদার ৫০-৭০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ চালে আলাদাভাবে জিংক মেশাতে ৫৮ কোটি টাকা খরচের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জিংকসমৃদ্ধ ধান উৎপাদনে এর চেয়ে খরচ অনেক কম।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ব্রি) এ পর্যন্ত জিংকসমৃদ্ধ ধানের সাতটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ব্রি৮৪ জাতের প্রতি কেজি ধানে ২৭ মিলিগ্রাম জিংক পাওয়া যায়। আর সম্প্রতি মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নতুন উদ্ভাবিত জাত বঙ্গবন্ধু ধান১০০-এ জিংকের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৫.৭ মিলিগ্রাম। যা মানুষের শরীরে জিংকের চাহিদার প্রায় অর্ধেক পূরণ করতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রি উদ্ভাবিত জিংকসমৃদ্ধ সাতটি জাতের মধ্যে ব্রি৬২, ৬৪, ৭৪, ৮৪, ১০০ ও ব্রি ধান১০২ জাত কৃষক পর্যায়ে চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে ব্রি৭৪ জাতটির আবাদ হচ্ছে বেশি। এই জাতের চালের দাম বাজারে স্বাভাবিক চালের মতোই। তাই চালে জিংক মেশানোর জন্য ৫৮ কোটি টাকা খরচ না করে ব্রি৭৪সহ অন্য জিংকসমৃদ্ধ চাল সংগ্রহ করার পক্ষে মত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

এ বিষয়ে ব্রির মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, জিংক ফর্টিফিকেশন (কৃত্রিমভাবে জিংক মেশানো) কোনোভাবেই টেকসই পদ্ধতি নয়। এভাবে জিংক মেশালে চালের পুষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। দুবার ধোয়ার পরই চলে যেতে শুরু করে জিংক। আবার গুদামে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় রাখলে চাল নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, দেশেই বায়ো ফর্টিফিকেশন বা প্রাকৃতিকভাবে জিংক ও পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ চালের জাত রয়েছে। এসব জাতের চাল পর্যাপ্ত উৎপাদনও হচ্ছে।

এদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদার বিপরীতে জোগান স্বাভাবিক রাখতে উৎপাদন বাড়াতে বায়ো টেকনোলজির ব্যবহার বাড়ছে কৃষি খাতে। গত ৫০ বছরে, ধান, ভুট্টা, সয়াবিন, তুলা, ক্যানোলা, পেঁপে ইত্যাদির বিপুল সংখ্যক ফসলের জাত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি দ্বারা উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় ব্যাপক অবদান রেখেছে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, বৈপ্লবিক জিনোম এডিটিং প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগাতে বাংলাদেশ সরকারকে সক্ষমতা বৃদ্ধি, গবেষণার জন্য অর্থায়ন এবং যথাযথ নীতি-সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জিনোম সম্পাদনার সঠিক ও সময়োপযোগী প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।

সর্বশেষ খবর