দুই দশকের প্রত্যাশার পর অবশেষে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য দরজা খুললো 'গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম'। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটির। যেখানে দেখা মিলছে মিশরের ইতিহাস, প্রাচীন সভ্যতার গৌরব এবং মানব সংস্কৃতির এক অনন্য উজ্জ্বল দলিল।
কায়রোর পাশেই বিখ্যাত গিজা পিরামিডের পাশে ১.১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এই বিশাল স্থাপনাটি। শনিবার মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বর্ণাঢ্য আয়োজনে এ জাদুঘরের উদ্বোধন করেন।
এরই মধ্যে একে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৭৯টি সরকারি প্রতিনিধি দল; যার মধ্যে ৩৯টি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন রাজা, যুবরাজ, রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান। যা প্রমাণ করে, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার প্রতি বিশ্বের গভীর আগ্রহ এবং বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষায় মিশরের নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা।
স্থাপনাটি প্রাচীন মিশরের জীবনের বিস্তারিত বিবরণীসহ ৫০ হাজারেরও বেশি নিদর্শন স্থান পেয়েছে। যা কোনো সভ্যতার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর হয়ে উঠেছে। যে তুলনায় প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘরে রয়েছে ৩৫ হাজার নিদর্শন।
জাদুঘরটির প্রবেশ পথেই রয়েছে ফেরাউন (রামসেস দ্বিতীয়ের) ৮২ টন ওজনের বিশাল ভাস্কর্য। যেটি দেখলে মনে হবে, হাজার বছরের ইতিহাসে প্রবেশের এক প্রতীকী দ্বার। জাদুঘরের বিশাল সিঁড়ির ধাপে ধাপে সাজানো শতাধিক প্রাচীন ভাস্কর্য ও স্তম্ভের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে মিশরের রাজবংশের ইতিহাস।
জাদুঘরটির প্রধান আকর্ষণ তুতানখামেনের ধন ভাণ্ডার। তুতানখামেনের স্বর্ণ মুখোশ, সিংহাসন, রথ, অলংকারসহ সম্পূর্ণ সংগ্রহ এক জায়গায় শোভা পাচ্ছে। এছাড়া খুফুর সোলার বোট রয়েছে আরেক অন্যতম চিত্তাকর্ষক হিসেবে। যেটি ৪ হাজার ৫০০ বছরের প্রাচীন রাজকীয় নৌযান, আবিষ্কৃত হয়েছিল পিরামিডের পাদদেশ থেকে।
সেই সঙ্গে আরও রয়েছে, ফেরাউন (রামসেস দ্বিতীয়), সেতি প্রথমসহ নানা রাজাদের বিশাল বিশাল ভাস্কর্য, রাজপরিবারের মমি, প্রাচীন প্যাপিরাস দলিল, দেয়ালচিত্র, স্বর্ণালংকার ও দেবদেবীর মূর্তি।
এই জাদুঘরটি রাষ্ট্রপতি আবদেল-ফাত্তাহ আল-সিসির নেতৃত্বে পরিচালিত একটি অন্যতম মেগা-প্রকল্প। ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ শুরু করেন। যার লক্ষ্য ছিল, কয়েক দশক ধরে স্থবিরতা ও ২০১১ সালের আরব বসন্তের বিদ্রোহে দুর্বল অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা।
জাদুঘরের নির্মাণকাজ ২০০৫ সালে শুরু হয়েছিল। তবে ২০১১ সালের বিদ্রোহের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তিন বছর ধরে কাজ বন্ধ ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কারণে উদ্বোধনও কয়েকবার স্থগিত করা হয়।
সূত্র: আল-জাজিরা, এবিসি নিউজ
বিডি-প্রতিদিন/এমই