বর্তমান বিশ্বে বিপন্ন এক প্রজাতির নাম গণ্ডার। গত কয়েক দশক ধরে স্তন্যপায়ী এ প্রাণীটিকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। সারা বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় গণ্ডারের বসতি সবচেয়ে বেশি। অথচ ২ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে ভিন্ন প্রজাতির গণ্ডার বাস করতো।
সম্প্রীতি নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রজাতিটির বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ওই সময় বসবাস করা গণ্ডারের আকার আধুনিক ভারতীয় গণ্ডারের সমান হলেও কোনো শিং ছিল না। তারা কানাডার সুমেরু অঞ্চলে ঘুরে বেড়াত।
ওইসময় অঞ্চলটি এখনকার সময়ের চেয়ে উষ্ণ ছিল। তবে সেখানে তুষারপাত হতো এবং শীতকালে কয়েক মাস সূর্যের আলো থাকত না।
বর্তমানে বিলুপ্ত কানাডিয়ান মিউজিয়াম অব নেচারের (সিএমএন) বিজ্ঞানীদের একটি দল রহস্যময় ‘আর্কটিক গণ্ডারে’র একটি নতুন প্রজাতি খুঁজে পেয়েছে। প্রায় চার দশক আগে নুনাভুত অঞ্চলের ডেভন দ্বীপের হাটন হ্রদের তলদেশে ফসিলটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়।
এই মেরু গণ্ডারের বৈজ্ঞানিক নাম এপিয়াসেরাথেরিয়াম ইটজিলিক। প্রাণিটির জীবাশ্ম পাওয়া গেছে ডেভন দ্বীপে-যা কানাডার সুমেরু দ্বীপপুঞ্জের অংশ এবং স্থায়ীভাবে পারমাফ্রস্টের ওপর অবস্থিত।
জীবাশ্ম হওয়া গণ্ডারটির প্রায় ৭৫ শতাংশ কঙ্কাল অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ফলে বিজ্ঞানীরা প্রাণীটিকে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
এর অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে হটন ক্রেটারে। এটি পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ উল্কাপিণ্ডের ফলে সৃষ্ট গর্ত, প্রায় ১৪ মাইল বিস্তৃত।
বর্তমানে আফ্রিকা ও এশিয়ায় মাত্র পাঁচ প্রজাতির গণ্ডার পাওয়া যায়। কিন্তু অতীতে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়ও গণ্ডার পাওয়া যেত। ফসিল রেকর্ড থেকে ৫০টিরও বেশি প্রজাতির গণ্ডার শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
ইতিহাসজুড়ে গণ্ডার বিভিন্ন আকার এবং আকৃতিতে বিরাজ করত। কিছু কিছু গণ্ডার ছিল জলহস্তীর মতো বৃহৎ, কিছু আবার ছিল তুলনামূলকভাবে ছোট। এপিথেরাসেরিয়াম ইটজিলিক এ পরবর্তী শ্রেণিতেই পড়ে। এটি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং হালকা ছিল; কিছুটা আধুনিক ভারতীয় গণ্ডারের মতো।
তবে আধুনিক আফ্রিকান গণ্ডারের চেয়ে ছোট ছিল এরা। বর্তমানের সব গণ্ডার প্রজাতির শিং থাকলেও শিং ছিল না এদের।
তবে কানাডার সুমেরু অঞ্চলে আবিষ্কৃত এ গণ্ডার বিজ্ঞানীদের অন্য একদিক দিয়েও ভাবাচ্ছে। এ আবিষ্কারের আগে কোনো গণ্ডারের এত উত্তরাঞ্চলে বাস করেছিল বলে বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না।
যেহেতু একটি প্রজাতির প্রাণি সেখানে বাস করত, তাই অন্যান্য প্রজাতির গণ্ডার এবং প্রাণীর পক্ষেও অসম্ভব নয় বাস করা। তাই আরও প্রাণী বৈচিত্র্য থাকা সম্ভব সেখানে।
কানাডার অটোয়ার কানাডিয়ান মিউজিয়াম অব নেচারের প্যালিওবায়োলজি বিভাগের প্রধান এবং গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ড্যানিয়েল ফ্রেজার জানান, মায়োসিন যুগে ডেভন দ্বীপের জলবায়ু না খুব বেশি ঠান্ডা, না খুব বেশি গরম ছিল। আর বনাঞ্চলে পূর্ণ ছিল এলাকাটা।
বিডি প্রতিদিন/কামাল