নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে লাপাত্তা হন ডা. উমর নবি। শত চেষ্টা করেও পরিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। তিন দিন পর দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে ঘটে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলা। এখন সেই হামলার মূল সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে এসেছে এই চিকিৎসকের নাম।
পুলিশ ডা. আদিল ও ডা. মুজাম্মিলকে গ্রেপ্তারের পরই উমর জানতে পারেন, তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। ওই দুই চিকিৎসকের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ, যার মধ্যে ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও।
জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার কয়াল গ্রামের মানুষ এখন জানেন, ৩৩ বছর বয়সী চিকিৎসক উমরই সন্দেহভাজন আত্মঘাতী হামলাকারী। এতে স্তব্ধ তাঁর পরিবার। ভাবি মুজাম্মিল বলেন, ‘শুক্রবার নবি ফোন করে বলেছিল, পরীক্ষার কাজে ব্যস্ত আছে, তিন দিনের মধ্যেই ফিরবে। আমরা তাঁকে অনেক কষ্টে পড়াশোনা করিয়েছি। সে কোনো দিন রাজনীতি বা সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। বিশ্বাস করা কঠিন।’
দিল্লির বোমা হামলায় ১২ জন নিহত এবং দুই ডজনের বেশি আহত হওয়ার পর জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ শুরু করে ব্যাপক অভিযান। কয়াল গ্রামে ডা. নবির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাঁর মা ও দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আত্মঘাতী হামলাকারীর ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মেলাতে উমরের মায়ের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়। মঙ্গলবার তাঁর বাবাকেও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য হেফাজতে নেয়া হয়।
আলফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ডা. নবির সহকর্মী ডা. সাজাদকেও আটক করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তিনি শুধুই উমরের বিষয়ে তথ্য জানেন নাকি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
এ ছাড়া সাম্বুরা গ্রাম থেকে পুলিশ আমির ও উমর রশিদ নামে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। পেশায় নলমিস্ত্রি আমিরকে এই হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলে ধারণা করছে তদন্তকারীরা। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ছবিতে দেখা যায়, তিনি হামলায় ব্যবহৃত গাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে আমিরের পরিবার বলছে, তিনি কখনো জম্মু–কাশ্মীরের বাইরে যাননি।
পরিবারের দাবি, সোমবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে পুলিশ হঠাৎ তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আমির ও উমরকে আটক করে। পুলিশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, তারা কোনো সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্রে জড়িত কি না।
এই ঘটনার সূত্রপাত সোমবার সকালের অভিযানে, যেখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধার হয়। এর আগে ১৯ অক্টোবর শ্রীনগরের নওগামে জইশ-ই-মোহাম্মদের একটি পোস্টার পাওয়ার পর থেকেই মামলাটি নিয়ে কাজ শুরু করেছিল পুলিশ। তাতে ধীরে ধীরে সামনে আসে এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের চিত্র।
প্রথমে গ্রেপ্তার হন আনন্তনাগের সরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক সিনিয়র রেসিডেন্ট ডা. আদিল আহমদ রাঠার। তাঁর জবানবন্দিতে আনন্তনাগের এক হাসপাতালের আলমারি থেকে উদ্ধার হয় একটি অ্যাসল্ট রাইফেল। পরে তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় আলফালাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. মুজাম্মিল আহমদকে। তাঁর দেওয়া তথ্যেই পুলিশ বিপুল বিস্ফোরকের হদিস পায়।
গত কয়েক দিনে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এমন এক ভয়াবহ চিত্র পেয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে—উচ্চশিক্ষিত, প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের এক চরমপন্থী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
তদন্তে জানা গেছে, লালকেল্লা বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ফুয়েল অয়েল ও ডেটোনেটর ব্যবহৃত হয়েছিল, যা ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকের সঙ্গেও মিলে যায়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে মামলাটির তদন্তভার জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) হাতে তুলে দিয়েছে।
পুলিশের দাবি, ডা. উমর এই হামলার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন ডা. আদিল আহমদ রাঠারের সঙ্গে মিলেই।
সোর্স: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/আশিক