দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার পর যুক্তরাষ্ট্র সফর সিরিয়ার জন্য এক নতুন সূচনা হতে পারে—এমনটাই মনে করছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। রাজধানী দামেস্কের রাস্তায় অনেকেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ওয়াশিংটন সফর সিরিয়াকে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে দেবে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে স্বাগত জানান। ১৯৪৬ সালে স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানকে ওয়াশিংটনে গ্রহণ করল যুক্তরাষ্ট্র। একসময় ওয়াশিংটন সরকার আল-শারার গ্রেপ্তারে ১ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। সেই প্রেক্ষাপটে এ সফরটি ঐতিহাসিক বলে মনে করা হচ্ছে।
ইন শিক্ষার্থী বুশরা আবদেল বারি বলেন, আল্লাহর কৃপায় এই সফর সিরিয়ার জন্য নতুন শুরুর দিক খুলে দেবে। আমরা চাই, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে সিরিয়া আবার গড়ে উঠুক।
আল-শারার সফরের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ‘সিজার আইন’ অনুযায়ী সিরিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এই আইনটি সিরিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে। এখন কংগ্রেসে আলোচনা শেষে নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করা হতে পারে।
গত এক দশকেরও বেশি সময় সিরিয়া ছিল রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আহমেদ আল-শারা অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। এরপর থেকেই তিনি পশ্চিমা দেশ ও উপসাগরীয় ধনী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সচেষ্ট। তবে তিনি এখনো রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করেননি।
বুশরা বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আমাদের শুধু ধ্বংসই এনে দিয়েছে। প্রিন্ট ব্যবসায়ী ওমর নাসেরও একই মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অতীতে সমাজতান্ত্রিক শিবিরে যোগ দেওয়ার খেসারত দিয়েছে সিরিয়া। এখন আমরা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আশাবাদী।
দামেস্কের কফিকিয়স্ক ব্যবসায়ী সাদ্দাম হাজ্জার বলেন, এখন সবকিছু ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। আমরা চাই সিরিয়া যেন ভবিষ্যতের নতুন মধ্যপ্রাচ্যের অংশ হতে পারে।
২০১১ সালে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারের দমন অভিযান থেকেই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছরের সেই যুদ্ধে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
২৫ বছর বয়সী এনজিওকর্মী লায়াল কাদ্দুর বলেন, ওয়াশিংটন সফরটি ছিল সাহসী রাজনৈতিক পদক্ষেপ। এতে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে এবং অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়তে পারে।
তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন—এখন হয়তো আন্তর্জাতিক চাপে সিরিয়ার স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
সিরিয়ার জনগণ আশা করছেন, এই ঐতিহাসিক সফর দেশটিকে বহু বছরের অচলাবস্থা থেকে বের করে এনে শান্তি ও পুনর্গঠনের নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল