বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রধান বিষয়ে কার কী ইশতেহার

প্রধান বিষয়ে কার কী ইশতেহার

আজই জানা যাবে বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন। দেড় বছর ধরে দেশটির প্রধান দুই প্রার্থী ডেমোক্রেট পার্টির হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প চষে বেড়িয়েছেন গোটা আমেরিকা। জনগণকে জানিয়েছেন তারা দেশের জন্য কে কী করতে চান। প্রধান সমস্যাগুলোর সমাধান কীভাবে করবেন তার ইশতেহারও ঘোষণা দিয়েছেন। দুই প্রার্থী কীভাবে সামলাবেন পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমরকৌশল। কেমন হবে তাদের বিবেচনা? কী নিয়েই বা তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক মতভেদ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে হিলারি ও ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি এবং অবস্থান জানিয়েছে বিবিসি।

অভিবাসন : যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের প্রক্রিয়া কঠোর করার দাবি তুলে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনেকেই এবারের নির্বাচনে এ ইস্যুকে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবেও বিবেচনা করছেন। ট্রাম্প বৈধ অভিবাসন কমানোর কথা বলছেন। নথি বা কাগজপত্র নেই এমন অভিবাসীদের দ্রুত দেশে পাঠানোর পাশাপাশি রিপাবলিকান এই প্রার্থী অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান করার পক্ষে। এ ছাড়া ট্রাম্প আমেরিকা ও মেক্সিকো সীমান্তে দুই হাজার মাইলের বেশি দীর্ঘ দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সমালোচকরা একে অবাস্তব এবং ব্যয়সাপেক্ষ বললেও রিপাবলিকান দল এ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে হিলারি অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সহজ করার পক্ষে। তিনি নথিবিহীন অভিবাসীদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পররাষ্ট্রনীতি : ওবামা প্রশাসনের যারা লিবিয়ায় মার্কিন বিমান হামলা চালানোর পক্ষে ছিলেন হিলারি তাদের মধ্যেও একজন। নির্বাচনী প্রচারে সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকার বিস্তৃত ভূমিকা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে আছে— বিমান চলাচল নিষিদ্ধ এলাকা জারি ও সিরীয় বিদ্রোহীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া। সিরিয়ায় স্থল সৈন্য মোতায়েনেরও বিপক্ষে তিনি। সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরই মধ্যে সিরিয়া যুদ্ধে কুর্দি পেশমেরগা যোদ্ধাদের সশস্ত্র অভিযানে সমর্থন জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের অবস্থান বেশ উদার। তিনি রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে জোর দিতে চান। আইএসকে পরাজিত করতে সিরিয়ার মাটিতে কয়েক হাজার স্থল সেনা পাঠানোর প্রস্তাব রয়েছে তার।

শরণার্থী : শরণার্থী বিষয়ে পুরো নেতিবাচক ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো থেকে শরণার্থী নেওয়া আমেরিকার জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে বলে মত ট্রাম্পের। এ জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত না ‘কঠোর বাছাই’ প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত শরণার্থী গ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হবে। রিপাবলিকান এ প্রার্থীর ভাষ্য, যুদ্ধের সহিংসতা থেকে জীবন বাঁচাতে যারা শরণার্থী হচ্ছে তাদের জন্য নিরাপদ এলাকা তৈরির দায়িত্ব মধ্যপ্রাচ্যেরই অন্য দেশগুলোর। অন্যদিকে হিলারি আমেরিকায় সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা বছরে ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬৫ হাজারে উন্নীত করতে চান। নির্বাচনী সমাবেশগুলোতে হিলারি বলেছেন— সহিংসতা এবং দমন-পীড়ন থেকে পালানো মানুষকে স্বাগত জানানো আমেরিকার ইতিহাসের অংশ।

জলবায়ু পরিবর্তন : হিলারি মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির কারণ। এ জন্য জ্বালানি শিল্পে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষপাতী তিনি। আলাস্কায় তেলের জন্য অতিরিক্ত খনন এবং কানাডা থেকে তেল আনার পাইপলাইন নির্মাণেরও ঘোর বিরোধী এ ডেমোক্রেট। তবে তেল অনুসন্ধানে খনন বন্ধ রাখতে পরিবেশবাদীদের দাবির সঙ্গে একমত নন তিনি। পরিবেশ নিয়ে পরিষ্কার কোনো অবস্থান নেই ট্রাম্পের। বিভিন্ন ভাষণ এবং টেলিভিশন বিতর্কে তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের’ জন্য পরিবেশের দোহাই দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন।

গর্ভপাত : গর্ভপাত বিষয়ে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের অবস্থান আগের মতোই দুই মেরুতে। ২০ সপ্তাহ পর গর্ভপাত ঘটানো যাবে না এমন নিয়ম চালুর বিরোধী হিলারি। পাশাপাশি গর্ভপাত ঘটানো নারীর ওপর বিধিনিষেধ আরোপেরও বিপক্ষে তিনি। যুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার নারীদের গর্ভপাতের ব্যবস্থা করছে যেসব বেসরকারি সংস্থা, তাদের কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে অনুদান দেওয়ারও পক্ষে হিলারি। সম্প্রতি প্ল্যানড পেরেন্টহুড নামে নারীদের স্বাস্থ্যসেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থসাহায্য কাটছাঁট করারও সমালোচনা করেছেন সাবেক এই সিনেটর। 

অন্যদিকে মার্চ মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘গর্ভপাত অবৈধ করা উচিত’ বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে যেসব নারী গর্ভপাত ঘটান তাদের ‘শাস্তি’ দিতে আইনও করতে চান তিনি।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ : এবারের নির্বাচনের অন্যতম আলোচিত ইস্যু ‘অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ’। ডেমোক্রেট পার্টির বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে হিলারিও মার্কিন জনগণের জন্য সহজলভ্য অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করতে চান। হিলারির ভাষ্য, কোনো মার্কিনিকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার আগে অবশ্যই তার অতীত ইতিহাস বিবেচনায় নিতে হবে। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি আছে তার নির্বাচনী ইশতেহারে। বলেছেন, হোয়াইট হাউসে গেলে বিপদের মুখে থাকা সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী খানিকটা বদলে দেবেন তিনি। এই দ্বিতীয় সংশোধনীতেই যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের অস্ত্র রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ট্রাম্প দ্বিতীয় সংশোধনী বদলে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ঘোর বিরোধী, বরং সবার জন্য অস্ত্রের অধিকারকে আরও বিস্তৃত করে তুলতে চান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক বিভিন্ন হামলায় হতাহতের ব্যাপারে তার ভাষ্য— অস্ত্রধারী জনগণ দুর্বৃত্তদের সহজে ঠেকাতে পারত এবং প্রাণহানির পরিমাণও কমত। ট্রাম্প-হিলারির মধ্যে বিতর্ক চলছে কর ব্যবস্থা নিয়েও। দুজনই বর্তমান প্রক্রিয়ার সংস্কার চান। হিলারি চান বছরে ৫ মিলিয়নের ওপর আয় করছে এমন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর অতিরিক্ত আরও ৪ শতাংশ ট্যাক্স যোগ করতে। তিনি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের ওপর আরও করের বোঝা চাপাতে চান। হিলারি বলছেন, এসব থেকে পাওয়া অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায়। ট্রাম্প এ চাকা ঘোরাতে চান উল্টো পথে। তিনি সর্বনিম্ন করসীমার পরিমাণ ও সম্পদ করের মাত্রা কমাতে চান। করপোরেট ট্যাক্সের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে উদ্ধৃত অর্থ দিয়ে নির্মাণ শিল্পে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে গেলে ট্রাম্প ১০ বছরে ২ কোটি ৫ লাখ চাকরি সৃষ্টি করারও ওয়াদা দিয়েছেন। নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ জোগাতে ট্রাম্প করপোরেট ট্যাক্স কমানোর পাশাপাশি নিয়মনীতিও শিথিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে হিলারির ইশতেহারে প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে মার্কিনিদের জন্য নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

ভোট এলো মহাকাশ থেকে : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার মহাকাশ  থেকে ভোট দিয়েছেন দুজন নভোচারী। মহাকাশ থেকে ভোট দিতে পারেন মার্কিন নভোচারীরা। ১৯৯৭ সালে এ সংক্রান্ত বিল পাস হয় ওই দেশে। এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা (নাসা) স্লোগান নির্ধারণ করেছে, ‘আপনি ভেসে থাকলেও ভোট দিন’। এবারের নির্বাচনে মহাকাশ থেকে  ভোটদাতাদের একজন নাসার নভোচারী শান কিমব্রাউট। কয়েক দিন আগে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে এ ভোট পাঠান। ভোটদানকারী অন্য নভোচারীর নাম ক্যাট রাবিন্স। তিনি গত সপ্তাহে মহাকাশ থেকে ফিরে আসার আগে এ ভোট দেন। সিএনএন এক খবরে উল্লেখ করেছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে অবস্থান করছেন কিমব্রাউট। সেখান থেকেই তিনি এ ভোট দেন। আগামী  ফেব্রুয়ারিতে কিমব্রাউট মহাকাশ থেকে দেশে ফিরে যাবেন। তখন নতুন একজন  প্রেসিডেন্টকে দেখবেন ওই নভোচারী। তবে আমেরিকার নির্বাচনে মহাকাশ থেকে ভোটের ঘটনা এটি প্রথম নয়। ১৯৯৭ সালে প্রথম আমেরিকান হিসেবে মহাকাশ থেকে ভোট দেন  ডেভিট উল্ফ। তবে তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল না। তখন তিনি রাশিয়ার মির মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করছিলেন। তখন ওই নভোচারী ইমেইলের মাধ্যমে ব্যালট পেপার পান। ভোট  দেওয়ার পরে ব্যালটটি তিনি কাউন্টি ক্লার্ক অফিসে পাঠিয়ে দেন। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আমেরিকায় নভোচারীদের জন্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট  দেওয়ার বিলটি পাস হয় ১৯৯৭ সালে।

সর্বশেষ খবর