বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী!

স্বীকৃতি দিচ্ছেন ট্রাম্প

জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী!

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় বুধবার (বাংলাদেশ সময়) আজ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চলেছেন। তা দিলে, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর যুক্তরাষ্ট্র হবে প্রথম রাষ্ট্র যারা জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। একই সঙ্গে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেবেন বলে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নাছোড়বান্দা ট্রাম্পের মনোভাবে স্বভাবতই ইসরায়েল সন্তুষ্ট, কিন্তু ফিলিস্তিনি ছাড়াও পুরো আরব বিশ্বের নেতারা সাবধান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকেই নস্যাৎ করবে। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত মনে হলেও আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরব বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য চরম এক উসকানি। ভবিষ্যতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে পূর্ব জেরুজালেম তার রাজধানী হবে এমনটাই ফিলিস্তিনিদের স্বপ্ন? এর আগে কোনো মার্কিন প্রশাসন জেরুজালেমের প্রশ্নে ইসরায়েলের প্রতি এতটা পক্ষপাতিত্ব দেখায়নি, যেমনটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করে দেখালেন। এজন্য মঙ্গলবারই ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। প্রায় সবাই তাকে এই সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের মতে, এর ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সহিংসতা দেখা দিতে পারে এবং স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ও সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান টেলিফোনে ট্রাম্পকে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। কট্টরপন্থি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ‘ইনতিফাদা’ বা বিদ্রোহের হুমকি দিয়েছে। জেরুজালেম মধ্যপ্রাচ্যে স্পর্শকাতর একটি ইস্যু। প্রাচীন এই শহরটি ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি বিরোধের একদম কেন্দ্রে। শুধু এই শহরটি নিয়ে দশকের পর দশক ধরে থেকে থেকেই সহিংসতা হয়েছে, প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা ইয়োল্যান্ডে নিল বলছেন, জেরুজালেমের অবস্থার যে কোনো পরিবর্তনের প্রভাব নানাবিধ এবং তা যে কোনো সময় আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে। প্রথম কথা, ধর্মীয় দিক থেকে জেরুজালেম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি শহর। ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় স্থাপনার অনেকগুলোই এই শহরে। এ ছাড়া এর রাজনৈতিক গুরুত্ব হয়তো এখন ধর্মীয় গুরুত্বকেও ছাপিয়ে গেছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই ইসরায়েল জেরুজালেমের পশ্চিমাংশে দেশের সংসদ ভবন স্থাপন করে। ’৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে যুদ্ধে জিতে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমও দখল করে নেয় এবং পুরো জেরুজালেম শহরটিকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা কোনো দিনই পূর্ব জেরুজালেমের দখল মেনে নেয়নি। তারা সব সময় বলে আসছে পূর্ব জেরুজালেম হবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী। ফিলিস্তিনি নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে কবর দিয়ে দেওয়া। তাদের কথা, জেরুজালেম তাদের না থাকলে, কোনো টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন কখনই সম্ভব হবে না। যদিও গত দশকগুলোয় পূর্ব জেরুজালেমের বহু জায়গা ইসরায়েল ইহুদি বসতি বানিয়েছে, কিন্তু তার পরও এখানকার সিংহভাগ বাসিন্দা ফিলিস্তিনি যারা শত শত    বছর ধরেই এই শহরে বসবাস করছেন।

ট্রাম্প কেন এই ঝুঁকি নিচ্ছেন? হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নেহাতই একটি বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন। তাদের কথা, ইসরায়েলকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া তার উদ্দেশ্য নয়। তারা বলার চেষ্টা করছেন, জেরুজালেমের সীমানা নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান এখনো আমেরিকা মেনে নিচ্ছে না, সেটা ঠিক হবে চূড়ান্ত শান্তি মীমাংসায়। এতে ফিলিস্তিনিরা কোনোভাবেই তাতে ভরসা পাচ্ছেন না। তাদের কথা, ট্রাম্প জেরুজালেমে ইসরায়েলের তৈরি ডজন ডজন অবৈধ ইহুদি বসতিগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে দিচ্ছেন। বিবিসি, এএফপি, সিএনএন।

সর্বশেষ খবর