বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোরীয় উপদ্বীপকে ‘শান্তির ভূমি’ করতে চান কিম-মুন

কোরীয় উপদ্বীপকে ‘শান্তির ভূমি’ করতে চান কিম-মুন

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের পিয়ংইয়ং সফরের মাঝেই কোরীয় উপদ্বীপে বইছে শান্তির সুবাতাস —এএফপি

একজনের বয়স ৩৫ বছর। আরেক জনের প্রায় দ্বিগুণ ৬৫ বছর। দুজনেই রাষ্ট্রপ্রধান। তবে যার বয়স ৩৫ তার নাম কিম জং-উন। উত্তর কোরিয়াকে এই তরুণ রাষ্ট্রপ্রধান শাসন করছেন ২০১১ সাল থেকে। আর ৬৫ বছরের মুন জায়ে-ইন দক্ষিণ কোরিয়াকে পরিচালনা করছেন গত বছরের মে মাস থেকে। তবে মুন যখন ক্ষমতায় আসেন তখন দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ছিল চরম সাপে-নেউলে। কথায় কথায় দক্ষিণ কোরিয়াকে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন কিম জং-উন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করে দক্ষিণ কোরিয়া। তাতে অংশ নেয় উত্তর কোরিয়া। আর এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতাই সেই যুদ্ধের ঝলকানি এক নিমিষেই শেষ করে দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় বহু বয়সের ফারাক দুই নেতা মহান বন্ধু হয়ে গেলেন। কাঁধে কাঁধ রেখে বললেন আর কোনো যুদ্ধ নয়, নয় অস্ত্রের (অবশ্যই পারমাণবিক) প্রতিযোগিতা। বহু দিনের উত্তপ্ত কোরীয় দ্বীপ এখন থেকে হবে শান্তির ভূমি। গতকাল উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন দুই কোরিয়ার এ দুই নেতা। এই বৈঠকেই উত্তর কোরিয়া তার প্রধান প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র ধ্বংস এবং তার মুখ্য পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। সেই সঙ্গে কিম জং-উন জানিয়েছেন তিনি সিউল সফরে যাচ্ছেন আর তা খুব শিগগিরই। এটা হলে হবে ১৯৪৫ সালের পর উত্তরের কোনো নেতার প্রথম দক্ষিণ কোরিয়া সফর।

পিয়ংইয়ংয়ে কিম ও মুনের বৈঠকে প্রতিবেশী দুই দেশের বিবদমান অনেক বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। তিন দিনের সফরে পিয়ংইয়ংয়ে আছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন। আজ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। চলতি বছরে কিমের সঙ্গে তৃতীয় দফায় হচ্ছে তার এই বৈঠক। গত জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং উনের বৈঠকের পর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বৈরিতা অবসানের চেষ্টা চলছে। বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে দুই কোরিয়ার নেতারা বেশ কয়েকটি বিষয়ে মতৈক্যের কথা তুলে ধরেন—

কোরীয় উপদ্বীপকে ‘পরমাণু অস্ত্র ও পরমাণু হুমকিমুক্ত একটি শান্তির জনপদে রূপান্তরে একমত হয়েছেন তারা। দুই দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানরা জানিয়েছেন, একটি বাফার জোন এবং উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা প্রতিষ্ঠা করা হবে। পাশাপাশি দুই দেশের বেসামরিক এলাকা পানমুনজোম গ্রামে তল্লাশি চৌকি প্রত্যাহার এবং স্থল মাইন তুলে নেওয়া হবে। উভয় পক্ষই ২০৩২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সহ-আয়োজক হতে রাজি হয়েছে।

প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া : নিউইয়র্কভিত্তিক রাজনৈতিক ঝুঁকি বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেসিয়া গ্রুপ বলেছে, বুধবারের এই বৈঠক ‘চমকপ্রদ শিরোনাম উপহার দেবে, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে করবে সামান্যই’। উত্তর কোরিয়া নিয়ে সংকটের সমাধানে এই অগ্রগতিকে ‘খুব আকর্ষণীয়’ বলে অভিহিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাপান সফররত ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পেলেই তারা দেশটির ওপর জারি করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে প্রস্তুত।

সর্বশেষ খবর