বুধবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

খাশোগি হত্যার নীলনকশা আগেই

খাশোগি হত্যার নীলনকশা আগেই

সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ওই সাংবাদিককে হত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়। তুরস্কের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ‘নগ্ন সত্য’ প্রকাশ করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এ কথা বলেছেন। এরদোগান বলেছেন, তার কাছে জোরালো প্রমাণ রয়েছে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভিতর খাশোগির মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং এক পরিকল্পিত অপারেশনের মাধ্যমেই তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। বক্তব্যে এরদোগান খাশোগির মৃতদেহ কোথায় এবং কে তাকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছে সৌদি আরবের কাছে তা জানতে চান। তিনি দাবি করেন, এই ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষ যে ১৮ জনকে ইস্তাম্বুলে এনে তাদের বিচার করতে হবে, এবং এ খুনে ভূমিকা রেখেছে এমন সবারই শাস্তি পেতে হবে। এ ভাষণের আগে এরদোগান বলেছিলেন  খাশোগিকে কীভাবে খুন করা হয়েছে— তার ‘নগ্ন সত্য’ তিনি প্রকাশ করবেন। এ কারণে তার এ ভাষণকে নিয়ে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছিল। ইস্তাম্বুল থেকে স্থানীয় সাংবাদিক সরোয়ার আলম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এরদোগানের ভাষণে যে ধরনের তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপিত হবে বলে লোকের মনে আশা তৈরি হয়েছিল— সেরকম কিছু তিনি বলেননি। এরদোগান বলেছেন, বেশ কিছুদিন আগেই এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে তা এরদোগান প্রকাশ করেননি। তবে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগে তিনটি দলে ভাগ হয়ে ১৫ জন সৌদি নাগরিক পৃথক পৃথক বিমানে করে ইস্তাম্বুলে আসেন। তিনি আরও বলেন, খাশোগি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকার আগেই ওই ভবনের নিরাপত্তা ক্যামেরা এবং নজরদারির সব ভিডিও সরিয়ে ফেলে দলটি।

খাশোগি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ এসেছিল ‘স্কাইপে’ : তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটের ভিতর খাশোগিকে হত্যার নির্দেশনা এসেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্কাইপের মাধ্যমে। সৌদি যুবরাজ সালমানের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানিই এ নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দেশটির দুটি গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের এই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাই লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকে রিয়াদে আটকে রাখা এবং সৌদি আরবের হাজারেরও বেশি অভিজাতকে গ্রেফতারের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে জানিয়েছে সৌদি সূত্রগুলো। কাহতানিই যুবরাজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো চালান। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কাহতানির ঘাড়ে ‘দোষ চাপলেও’ যুবরাজের ইশারা ছাড়া তিনি কোনো কিছু করবেন, এমনটা হতে পারে না বলেও অনুমান অনেকের।  সৌদি রাজপ্রাসাদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, কাহতানিকে সাংবাদিক হত্যার দায় নিতে যুবরাজই বলেছেন। সালমান প্রশাসনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর মতো খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সময়ও কাহতানির উপস্থিতি ছিল বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো; এবার অবশ্য এই উপস্থিতি ছিল ‘ভার্চুয়াল’। স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা সৌদি রাজপরিবারের সমালোচক সাংবাদিক খাশোগি ২ অক্টোবর স্থানীয় সময় বেলা ১টার দিকে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকেছিলেন। তাত্ক্ষণিকভাবে ১৫ সদস্যের একটি সৌদি গুপ্তচর দল তাকে কনস্যুলেট ভবনের ভিতরে বন্দী করে ফেলে। বন্দী খাশোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভিতর একটি কক্ষে স্কাইপের মাধ্যমে কাহতানি জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে সৌদি গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে আরবের এমন এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে কাহতানি একের পর এক অপমান করলেও খাশোগি নিজের মতো করে সেসবের জবাব দিয়েছিলেন। তবে এ সময় গুপ্তচর দলের সঙ্গে তার বিরোধ বেধে যায়। এরই এক পর্যায়ে কাহতানি তার লোকদের খাশোগিকে মেরে ফেলতে বলেন। ‘কুকুরটার মাথা আমার কাছে নিয়ে এস।’ কাহতানি এমন নির্দেশনাই দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে এক তুর্কি গোয়েন্দা সূত্র।

 

সর্বশেষ খবর