শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৬ বছর, দায় কার

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৬ বছর, দায় কার

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ছিল রবিবার। সেদিন ভারতের সঙ্গে গোটা বিশ্ব কাঁপছিল। সেদিন সকাল থেকে অযোদ্ধায় লাখ লাখ মৌলবাদী হিন্দু তথা করসেবক বাবরি মসজিদ প্রাঙ্গণে জমা হতে থাকে। দুপুর নাগাদ হাজার হাজার করসেবক বাবরি মসজিদের গম্বুজের ওপরে চড়ে যায়। দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে বাবরি মসজিদের প্রথম গম্বুজটা ভেঙে পড়ে। এর পর কয়েকশ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ধুলায় মিশিয়ে দেয় করসেবকরা। গতকাল বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে শহরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কাজ করছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতারে পুলিশকে দেওয়া হয়েছে সবুজ সংকেত। ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, প্রত্যেক বছরের ৬ ডিসেম্বর দিনটিকে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল ‘শৌর্য দিবস’ ও ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে। অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায় দিনটিকে ‘ইয়াম-ই-গম’ (দুঃখের দিন) ও ‘ইয়াম-ই-শ’ (কাল দিবস) হিসেবে পালন করে। দুই সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন উদযাপনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের সংঘাত কিংবা সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সেজন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশ বলছে, দুই সম্প্রদায়ের মানুষের উদযাপন সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মুঘল সম্রাট বাবরের নির্দেশে ১৫২৮-২৯ সালে অযোদ্ধায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন মীর বাকি। ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক এই মসজিদে হামলা চালিয়ে ভারতের উগ্রপন্থি হিন্দু করসেবক গোষ্ঠীর সদস্যরা ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ধ্বংস করে। কিন্তু ওই ঘটনার পর প্রশ্ন জাগছে এই ঘটনার দায় কার। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পি ভি নরসিমা রাও। সে সময় তার মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্য তাকে জরুরি অবস্থা বা তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবিকে প্রধানমন্ত্রী সেদিন অনেকটাই নির্লিপ্ত ছিলেন। পরিস্থিতি সামলানোর কোনো ব্যবস্থাই নেননি। সে সময়ের কয়েকজন মন্ত্রী ও সাংবাদিকের বইয়ে তথা লেখনিতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে।

ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তার আত্মজীবনী ‘দা টার্বুলেন্ট টাইমস’এ লিখেছেন, বাবরি মসজিদকে ভেঙে পড়ার হাত থেকে রক্ষা না করতে পারাটা পি ভি-র সব থেকে বড় ব্যর্থতা। অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দায়িত্বটা তার দেওয়া উচিত ছিল নারায়ণ দত্ত তিওয়ারীর মতো সিনিয়র, অভিজ্ঞ নেতাদের। সে সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী মুখার্জি লিখেছেন এমন মানুষকে এই কাজের ভার দেওয়া উচিত ছিল, যারা উত্তর প্রদেশের রাজনীতিটা বোঝেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস বি চহ্বান আলাপ-আলোচনার জন্য সক্ষম ছিলেন ঠিকই, কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিটা তিনি আঁঁচ করতে পারেননি। সেই সময়কার সিনিয়র কংগ্রেস নেতা ও রাও মন্ত্রিসভার মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী অর্জুন সিং তার আত্মজীবনী ‘আ গ্রেইন অফ স্যান্ড ইন দা আওয়ার গ্লাস অফ টাইম’-এ লেখেন ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। বিবিসি

সর্বশেষ খবর