শনিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সৌদিতে আমরণ অনশনে রোহিঙ্গারা

সৌদি আরবের একটি বন্দিশালায় আমরণ অনশন শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। গত চার মাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার অনশনে গেল তারা। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে ফেরত না পাঠানোর দাবিতে তারা এই অনশন শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা আমরণ অনশন শুরু করেছে সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থিত সুমায়সি বন্দিশালায়। মিডল ইস্ট আইকে রোহিঙ্গারা বলছে, ‘আমরণ অনশন করা ছাড়া আমাদের হাতে এখন আর কোনো বিকল্প নেই। কেননা গত মাসে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব।’ সুমায়সি বন্দিশালায় রোহিঙ্গাদের অনশন নিয়ে কিছু ছবি ও ভিডিও ফাঁস হয়েছে। সে সব ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গারা তাদের প্রতিদিনের বরাদ্দ খাবার নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। মেঝেতে তাদের না খাওয়া খাবারের প্যাকেট পড়ে আছে। ১৯৫১ সালে প্রণীত জাতিসংঘের রিফিউজি কনভেনশন অ্যাক্ট-এ স্বাক্ষর করেনি সৌদি আরব। শরণার্থী নীতির অনুপস্থিতিতে সেখানে থাকা শরণার্থীদের কাজের অনুমতি কিংবা চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হয় না দেশটির। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে সৌদি আরবেই সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। ১৯৭৩ সালে বাদশাহ ফয়সালের সময় মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের সৌদি আরবে আশ্রয় দেওয়া হয়। সে দেশে জš§ নেওয়া রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা হয়। সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যাপারে ২০১৮ সালের অক্টোবরে দীর্ঘ চার মাসের অনুসন্ধান শেষ করে মিডল ইস্ট আই। ওই বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত মিডল ইস্ট আইর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোনো অভিযোগ ছাড়াই সৌদি আরবে বেশ কয়েক বছর ধরে আটক রাখা হয়েছে কয়েকশ রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের।

এদের বেশির ভাগ ২০১১ সালের পর মিয়ানমারের নিপীড়ন এড়াতে ও জীবিকার তাগিদে তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে পৌঁছয় ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে।

অনশনে অংশ নেওয়া একজন বৃদ্ধকে ইতিমধ্যে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। জাহিদ বলেন, ‘আমরা জানি না আর কতদিন এই আন্দোলন চালাতে পারব। তারা আমাদের খাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাদের মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জোর করে পাঠানোর সময় রোহিঙ্গা ভিডিওর মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য জানানোর পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’ গত চার মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অনশন শুরু করল সেখানকার রোহিঙ্গারা। রাফিদ নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতার আশ্বাস দিয়ে গতবারের অনশন ভাঙিয়েছিল। তারা জানিয়েছিল, অনশন ভাঙা হলে অল্পসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ‘অন্তত ৬০ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশিদের মতো করে ফেরত পাঠানো হয়। এটা দেখার পর আমরা ফিরে যেতে চাই না। তারা বলেছিলেন আমাদের মুক্তি দিবেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ এখান থেকে যেতে পারেনি। আমরা আপনাদের সাহায্য চাই। আমাদের এখানে রাখবেন না।’

এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর কোনো মন্তব্য করেনি।

সর্বশেষ খবর