শনিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে সুস্থ দেহ, পরিবেশ

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে সুস্থ দেহ, পরিবেশ

সুস্থ থাকার জন্য খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। পৃথিবীকে রক্ষার প্রতিশ্র“তি নিয়ে একটি ডায়েট প্রস্তুত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা দিয়ে সামনের দশকগুলোতে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষকে খাওয়ানো যাবে। আর এটা সম্ভব হবে আমাদের গ্রহের কোনো ক্ষতি না করেই। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি। ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়াবে এক হাজার কোটিতে। এখনকার খাদ্যাভ্যাস বজায় থাকলে পৃথিবী সে সেময় এত মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদন করতে পারবে না। চিকিৎসাশাস্ত্রবিষয়ক সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’এ বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

‘ল্যানসেটে’ প্রায় ৩৬ জন গবেষকের দল বলছে, খাদ্যাভ্যাসের দিক দিয়ে দুনিয়াজুড়েই বড় ধরনের বদল আনতে হবে। আর তা হলো দ্য প্লানেটারি হেলথ ডায়েট অর্থাৎ পৃথিবী সুরক্ষায় স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মাধ্যমে। এই ডায়েটটি তৈরি করা হয়েছে মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার বাদ না দিয়েই। তবে প্রোটিন চাহিদার একটা বড় অংশ মেটাতে সেখানে বাদাম, বিভিন্ন ধরনের ডাল আর বীজ যুক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হলো ডায়েট থেকে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে বিকল্প প্রোটিনের উৎস্য খোঁজা। যে পুষ্টিকর খাবার আমরা এড়িয়ে যেতে চাই সেগুলোর প্রতি আগ্রহ জš§ানোর ওপরও তারা জোর দেন।

খাদ্যাভ্যাসে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে : মাংস পুরোপুরি খাওয়া নিষেধ করা হয়নি। তবে গবেষণায় বলা হয়েছে সেই পরিমাণ হবে পরিমিত হারে। যেমন রেড মাংসের কোনো খাবার যেমন বার্গার যদি খেতেই হয় তাহলে তা সপ্তাহে একদিন হতে পারে। এ ছাড়া সপ্তাহের অন্য আরেকদিন মাছ বা মুরগির মাংস দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারেন। আর বাকি দিনগুলোতে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে হবে বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে। এক্ষেত্রে গবেষকরা প্রতিদিন বাদাম, বীজ বা ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া নানা ধরনের ফল এবং সবজি খাওয়া বাড়ানোর কথাও জানান তারা। এই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন কি জীবন বাঁচাবে : গবেষকরা বলছেন, যে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে যেসব অসুস্থতা হয়ে থাকে যেমন, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সার, এগুলো উন্নত দেশের মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সেই হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

এই ডায়েট কি পৃথিবীকে রক্ষায় সাহায্য করবে? গবেষকদের লক্ষ্য হলো সামনের দশকগুলোয় বিশ্বের বাড়তি জনসংখ্যার সবার খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করা তা পরিবেশের ক্ষতি না করেই। যেখানে বরং ১ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো যাবে। ২. জৈববৈচিত্র্যের যেসব প্রজাতি বিলুপ্ত যাচ্ছে সেগুলো রক্ষা করা যাবে। ৩. কৃষিজমি আর বাড়াতে হবে না। বিবিসি

ডায়েটের পূর্ণ তালিকা

১. বাদাম- দিনে ৫০ গ্রাম। ২. শিমের বিচি, ছোলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল- দিনে ৭৫ গ্রাম। ৩. মাছ- দিনে ২৮ গ্রাম। ৪. ডিম- প্রতিদিন ১৩ গ্রাম (সপ্তাহে একটি অথবা দুটি ডিমের বেশি নয়) ৫. মাংস- লাল মাংস দিনে ১৪ গ্রাম এবং মুরগির মাংস দিনে ২৯ গ্রাম। ৬. কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ শস্যজাতীয় খাবার যেমন রুটি এবং চাল দিনে ২৩২ গ্রাম খাওয়া যাবে। এ ছাড়া আলুর মতো অন্যান্য শ্বেতসার সবজি দিনে ৫০ গ্রাম। ৭. ডেইরি বা দুগ্ধজাত খাবার দিনে ২৫০ গ্রাম। যা কিনা এক গ্লাস দুধের সমান। ৮. শাকসবজি- দিনে ৩০০ গ্রাম এবং ফল ২০০ গ্রাম। এ ছাড়া এই ডায়েটে চাইলে ৩১ গ্রাম চিনি এবং ৫০ গ্রাম তেল যেমন জলপাই তেল যোগ করা যাবে।

সর্বশেষ খবর