রবিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মোদি সরকার হিটলারের চেয়ে ভয়ঙ্কর, একে হটিয়ে দিন

কলকাতায় মমতার ডাকা জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতাদের আহ্বান

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মোদি সরকার হিটলারের চেয়ে ভয়ঙ্কর, একে হটিয়ে দিন

কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে গতকাল অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তৃতাকালে বিরোধীদলীয় নেতারা ভারতের   কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের উৎখাতের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এরা হিটলারমুসোলিনির চেয়েও ভয়ঙ্কর। এদের হটিয়ে দিন। তারা বলেন, লোকসভা নির্বাচনে এই দল জিতে ক্ষমতায় ফিরলে ভারত ধ্বংস হয়ে যাবে। জনতা তখন স্লোগান দেয় ‘বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও।’ সমাবেশে বক্তৃতার শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘আগামী দিনে  মোদিবাবুর এক্সপায়ারি ডেট হয়ে গেছে। যখন কোনো ওষুধ কেনা হয় সেখানে এক্সপায়ারি ডেট থাকে। এই সরকারের এক্সপায়ারি ডেট শেষ হয়ে গেছে। আগামী দিনে নতুন সকাল হতে চলেছে। আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে কাজ করব- এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’

জনসভায় আর্থিক নীতি থেকে শুরু করে নোট বাতিল, জিএসটি, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি, রাফাল যুদ্ধ বিমান চুক্তিসহ একাধিক প্রসঙ্গে বিজেপিকে তোপ দাগেন মমতা। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক, সিবিআই, আরবিআই, আয়কর, গণতন্ত্র- সব প্রতিষ্ঠানেই ধস, কেবল বিজেপিই বস- এভাবে চলতে পারে না। রাজনীতিতে একটা সৌজন্যবোধ, লক্ষণরেখা আছে কিন্তু বিজেপি তা মানে না। অখিলেশ, মায়াবতী লালু প্রসাদ এমনকি আমাকেও তারা ছাড়েনি। ওদের সঙ্গে থাকলে সে সৎ, আর বিরুদ্ধে গেলেই চোর?  জনসভা থেকে মমতার আহ্বান ‘দেশে আর আচ্ছে দিন আসবে না। অনেক হয়েছে আচ্ছে দিন, এবার বিজেপিকে বাদ দিন। অনেক হয়েছে আচ্ছে দিন, এবার দিল্লিতে বদল এনে দিন। অনেক হয়েছে আচ্ছে দিন, বিজেপিকে পুরো ধরাশায়ী করে দিন। দেশকে ভালো রাখতে চাইলে, দেশের মানুষকে ভালো রাখতে হলে, সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিজেপিকে বাদ দিন। ওরা ক্ষমতায় এলেই দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।’ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে, দিল্লিতে নতুন সরকার হলে আবার এই ব্রিগেডে জনসমাবেশ হবে বলেও আশ্বাস দেন মমতা। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিবিরোধী জোট শক্তিশালী করতেই এদিন ব্রিগেডে ‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’ সমাবেশের ডাক দেন মমতা ব্যানার্জি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল থেকে শুরু করে এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ.ডি. কুমারস্বামী, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া, দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাঘাম (ডিএমকে) সভাপতি এম.কে. স্ট্যালিন, মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শারদ পাওয়ার, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) নেতা ওমর আবদুল্লা, উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, দলিত নেতা জিগনেশ  মেবানি, গুজরাটের পাতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদবসহ  দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা। এদিনের মোদিবিরোধী সমাবেশ ছিল কার্যত রাজনৈতিক চাঁদের হাট। এদিকে কলকাতায় ‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’ সমাবেশ নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। কলকাতায় যখন বিরোধীরা বক্তব্য রাখছেন ঠিক তখন কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল ‘দাদর এবং নগর হাভেলি’র সিলভাসায় এক অনুষ্ঠান থেকে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘যারা একটা সময় কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছিল, তারাই আজ একজোট হয়েছে। এই মহাজোট আসলে মোদি বা বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, বরং এটা দেশের মানুষের বিপক্ষে। তাদের অনেকেই এখনো এই জোটে অংশ নেয়নি, অথচ ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে দর কষাকষি শুরু হয়ে গেছে।’ গতকাল ব্রিগেড জনসভাকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছিল।

নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-জুটির সমালোচনা করে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ‘অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন মোদি যদি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী না হন তবে কে হবেন? আমি তাদের বলতে চাই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেবলমাত্র নতুন প্রধানমন্ত্রীই তৈরি হবে না, বিজেপির স্বৈরাচারী শাসনেরও অবসান হবে।’ কেজরিওয়ালের অভিমত ‘গত ৭০ বছরে পাকিস্তানের তরফে ক্রমাগত ভারতকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তান এদেশে বিভেদের বীজ রোপণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ গত পাঁচ বছরে মোদি-শাহ জুটি তা করে ফেলেছেন। এই জুটি সারা দেশে ঘৃণার বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে, গোটা দেশকে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।’ এই জুটি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে দেশের সংবিধান বদলে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কেজরিওয়াল।

এ দিনের সমাবেশ থেকে এম. কে. স্ট্যালিন পরিষ্কার জানিয়ে দেন তাদের লক্ষ্যই হলো কেন্দ্র থেকে মোদি সরকারকে সরানো। তিনি বলেন, ‘আগামী লোকসভা নির্বাচন হবে দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করেছে। যে কোনো উপায়ে তা বন্ধ করতে হবে। সেই কারণেই আমি বলব এটা হবে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর অভিযোগ ‘মোদি যদি ফের ক্ষমতায় আসেন তবে দেশ পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে যাবে।’

মোদিকে উৎখাত করতে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী আঞ্চলিক দলগুলোকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিজেপিকে সরাতে অ-বিজেপি দলগুলোর নেতাদের উচিত হাতে হাত মেলানো। বিজেপি কার্যত কাগুজে বাঘ-এ পরিণত হয়েছে। আমাদের বিরোধী দলের জোটই মানুষের আকাক্সক্ষা বুঝতে পারে এবং তা পূরণ করতে পারে।’ মমতা ব্যানার্জির প্রশংসা করে কুমারস্বামী বলেন, ‘মমতা দিদি সবসময়ই দেশের রোল মডেল। তিনি বরাবরই নারীদের ক্ষমতায়নের পক্ষে সওয়াল করেন। আমি এই জনসভায় অংশ নিতে পেরে সত্যিই গর্বিত।’ 

মমতার ডাকে এই জনসভায় উপস্থিত হয়ে শত্রুঘ্ন সিনহা জানান, ‘আমাকে সবাই জিজ্ঞাসা করেন আমি বিজেপিতে থেকেও তার বিরুদ্ধে বলি কেন, তবে কি আমি বিশ্বাসঘাতক? আমি বলব সত্যি কথা বলাটা যদি বিশ্বাসঘাতক হয়, তবে তাই। মানুষের ওপর বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকা যায় না।’

অখিলেশ যাদব বলেন, ‘২০১৯ সালেই ভারত নতুন প্রধানমন্ত্রী দেখবে।’

সর্বশেষ খবর