রবিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয় ভারত : অমর্ত্য সেন

রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয় ভারত : অমর্ত্য সেন

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিতে আইন পাস করা ভারতের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের উপেক্ষার অভিযোগ করেছেন নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আটক করে মিয়ানমারে প্রত্যর্পণের ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সংবাদমাধ্যম নিউজ এইট্টিনকে তিনি বলেছেন, নাগরিকত্বের সঙ্গে ধর্মীয় পরিচয়ের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। ধর্মীয় সূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া না দেওয়ার আইন পাস করাটা ভারতের সংবিধানের মূল নীতির ব্যত্যয়। প্রতিবেশী হিসেবে রোহিঙ্গাদেরও ভারতের সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার আছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে।

এমন বাস্তবতায় রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০ লাখে।

ভারতের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন-২০১৬ তে ২০১৪ সালের গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, শিখ ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ভারতের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত এই নতুন আইনে কোনো সুসংবাদ নেই আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য। ভারত বরং তাদের চিহ্নিত করে মিয়ানমারে প্রত্যর্পণের আদেশ দিয়েছে। ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তার ভাষ্য, ‘এটা অদ্ভুত যে প্রতিবেশী দেশগুলোর অমুসলিমদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দিলেও মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো জায়গা দিতে পারছে না ভারত। অথচ ভারতের শাসকপক্ষ ভালো করেই জানে মিয়ানমারে তাদের কী ধরনের অসহিষ্ণুতা ও নিপীড়নের স্বীকার হতে হচ্ছে।’ অমর্ত্য সেন আরও বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশী দেশগুলোতে কঠিন অবস্থায় থাকা অপরাপর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মতো তাদেরও সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার আছে। আমি মনে করি, ধর্মের সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। এটাই হচ্ছে মূল কথা। এটা সাংবিধানিক নীতিও। ভারত স্বাধীন হওয়ার কালে কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তাই আমি মনে করি, নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিমের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ধর্মীয় বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকার সাংবিধানিক নীতির নিশ্চিত লঙ্ঘন।’

সর্বশেষ খবর