মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভেনেজুয়েলার সেনা ও জনগণকে বিভক্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র

চমস্কিসহ ৭০ বুদ্ধিজীবীর খোলা চিঠি

ভেনেজুয়েলার সেনা ও জনগণকে বিভক্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র

সুবিখ্যাত মার্কিন ভাষাতাত্ত্বিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির ইমেরিটাস অধ্যাপক নোয়াম চমস্কিসহ ৭০ জন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ভেনেজুয়েলাকে সংকটের চূড়ায় ঠেলে দিয়েছে। হুয়ান গুইদোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন সুস্পষ্টভাবে ভেনেজুয়েলার সংকটকে তীব্র করেছে। তারা ভেনেজুয়েলা সেনাবাহিনীকে বিভক্ত ও জনগণের মেরুকরণকে আরও তীব্র করতে কোনো একটি পক্ষকে বেছে নিতে বাধ্য করছে। এর সুস্পষ্ট এবং অনেক সময় বর্ণিত লক্ষ্য হলো নিকোলাস মাদুরোকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের পর গত বুধবার নিজেকে ভেনেজুয়েলার অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা হুয়ান গুইদো। কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে ‘স্বীকৃতি’ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বেশ কয়েকটি মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণও করে। কিন্তু চীন, রাশিয়া, তুরস্কসহ আরও কিছু দেশ মাদুরোর ওপরই আস্থা জ্ঞাপন করে। তার চেয়েও বড় কথা দেশটির সেনাবাহিনী মাদুরোর প্রতি এখনো সমর্থন ধরে রেখেছে। গত পরশু সেনাবাহিনীর মহড়াতে অংশ নেন মাদুরো। এমন বাস্তবতায় ভেনেজুয়েলায় অভ্যুত্থানের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করছে বলে উল্লেখ করেছেন চমস্কিসহ অন্য বুদ্ধিজীবীরা। খোলা চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘মার্কিন সরকারকে অবশ্যই ভেনেজুয়েলার সরকার উৎখাতের উদ্দেশ্যে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সব ধরনের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার মিত্ররা মিলে ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলেছে। যা মানুষকে অপ্রয়োজনীয় দুর্ভোগ, সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।’ ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বুদ্ধিজীবীদের খোলা চিঠিতে মাদুরোবিরোধী মার্কিন কৌশলের কারণেই সহিংসতা বাড়ার কথা ব্যাখ্যা করে দেখানো হয়েছে। ওই মার্কিন কৌশল ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক ক্রীড়নকদের মধ্যে মেরুকরণ বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও খোলা চিঠিতে মন্তব্য করেছেন তারা। চিঠিতে লেখা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেরুকরণ জোরালো হয়েছে। এর একটি কারণ হলো নির্বাচন বহির্ভূত উপায়ে নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে সরানোর লক্ষ্যে বিরোধীদের একটি কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। মাদুরোবিরোধীরা ভোটের প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে সহিংস বিক্ষোভ ও সামরিক অভ্যুত্থানের মতো উপায়ে মাদুরো সরকারকে উৎখাত করতে চাইছে। কট্টর বিরোধীদের এই লক্ষ্য অর্জনে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ভেনেজুয়েলায় চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধ দায়ী বলে ওই খোলা চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে,  ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ভেনেজুয়েলার উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, খাবার ও ওষুধ সংকটকে ভয়াবহ করেছে, তেল উৎপাদনে ধস ও অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়েছে। ভেনেজুয়েলায় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় মার্কিন সহযোগিতার সমর্থনকারী আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সমালোচনা করেছেন বুদ্ধিজীবীরা। সতর্কতা জানিয়ে তারা চিঠিতে বলেছেন, এই সমর্থনের ফল রক্তপাত, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা হতে পারে। খোলা চিঠিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভেনেজুয়েলার সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যকার আলোচনায় সমর্থনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনাই সমাধানের একমাত্র পথ এবং এই আলোচনার আহ্বান হতে হবে ভেনেজুয়েলার জনগণ, এই অঞ্চল এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের নীতির ভিত্তিতে’। দ্যা গার্ডিয়ান

 

সর্বশেষ খবর