বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সেনাবাহিনী নয়, সু চির কারণেই বন্দী রয়টার্স সাংবাদিকরা

রোহিঙ্গা গণহত্যার খবর সংগ্রহ ও প্রচারের কারণে মিয়ানমারে গ্রেফতার হওয়া রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের মুক্তি না দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনী নয়, দেশটির নেত্রী অং সান সু চির ভূমিকাই বেশি। রয়টার্স সাংবাদিকদের মুক্তির জন্য সু চির সঙ্গে কথা বলা বেশ কয়েকজন কূটনীতিক ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এই খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় পুলিশ সদস্যদের আমন্ত্রণে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন মিয়ানমারে কর্মরত রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে ও। পরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাফতরিক গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার দেখায়। রাখাইনের ইন দিন গ্রামে সেনা অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার ওপর অনুসন্ধান চালাতে গিয়েই মামলার কবলে পড়েন তারা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের বিরুদ্ধে সাত বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণা করে ইয়াঙ্গুনের একটি জেলা আদালত।

ওই বছরের নভেম্বরের শুরুতে ইয়াঙ্গুনের হাই কোর্টে দুই সাংবাদিকের পক্ষে আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা। গত ১১ জানুয়ারি আপিল খারিজ করে নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখে হাই কোর্ট। ১ ফেব্র“য়ারি রায়ের বিরুদ্ধে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন তারা। আইনি ব্যবস্থার আওতায় সাজা থেকে মুক্তি পেতে দুই রয়টার্স সাংবাদিকের জন্য এ আপিলকেই শেষ সুযোগ বলে মনে করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে সু চি চাইলে রয়টার্স সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে পারতেন। কিন্তু এখন তা অসম্ভব বলে মনে করছেন এই বিষয়ে সু চির সঙ্গে একান্ত আলোচনা করা বেশ কয়েকজন কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তা। তারা জানিয়েছেন, এই দুই সাংবাদিককে বন্দী রাখার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী সেনাবাহিনী নয়, সু চিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

জ্যেষ্ঠ এক পশ্চিমা কূটনীতিক জানান, গত বছর রয়টার্স সাংবাদিকের বিষয়টি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যক্তিগতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কূটনীতিক জানান, সাংবাদিকদ্বয়কে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বাধা নেই। বেসামরিক সরকারের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেব। একইভাবে জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যেও অনেকে মনে করেন রয়টার্স সাংবাদিকদের ঘটনাটি মিয়ানমারের জন্য বিব্রতকর। তাদের অনেকেই ওয়া লোন ও কিয়াউ সোয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট উইন মুইন্ট। মার্চ মাসে তিনি দায়িত্ব নেন এবং তাকে বেছে নিয়েছেন সু চি নিজেই। প্রেসিডেন্ট ও সু চির ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এপ্রিলে মিয়ানমারের নববর্ষে জল উৎসবের সময় কয়েক হাজার রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই তালিকায় প্রেসিডেন্ট রয়টার্সের দুই সাংবাদিককেও মুক্তি দিয়েছিলেন। তাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দেন সু চি। উচ্চপদস্থ পশ্চিমা আরেক কূটনীতিক বলেন, মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারের অনেকেই মনে করেন রয়টার্স সাংবাদিকদের মুক্তি দেওয়া উচিত। অনেকেই আছেন। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সু চিই চান না। এটা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারা।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় গঠিত সু চির গঠিত কমিশনের এক সাবেক সদস্য ও থাই কূটনীতিক কবসাক চুটিকুল জানান, সিদ্ধান্তটা শেষ পর্যন্ত সু চিরই। কেউই তার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে না। কোন বিষয়টি তাকে প্রভাবিত করছে তা অনুধাবন করা কঠিন।

সর্বশেষ খবর