রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আরেকটি রক্তক্ষয়ী হামলা হলে পরিস্থিতি কী হবে

কাশ্মীর ইস্যু

আরেকটি রক্তক্ষয়ী হামলা হলে পরিস্থিতি কী হবে

ভারত শাসিত কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলিতে গুরুতর আহত এক সাধারণ নাগরিককে জুম্মু কাশ্মীরের মেন্দাহার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে তার পরিবার দাবি করে পাকিস্তান সেনাদের গুলিতে তিনি আহত হন -এএফপি

প্রয়োজনে তোমার সীমানার ভিতরে আক্রমণ চালাতে আমরা দ্বিধা করব না, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ রেখো না। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক অস্থিরতা চলাকালে দুই দেশ একে অন্যকে বেশ পরিষ্কারভাবেই এমন একটি বার্তা দিয়েছে। আবার হুঁশিয়ারির পাশাপাশি সৌজন্য আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশেও দুই দেশ সমান উদারতার পরিচয় দিয়েছে। আক্রমণ করার ক্ষেত্রে দুই দেশই বেছে নিয়েছে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু, যেন কোনো পক্ষের সেনারাই আঘাত না পায়। এরপর ক্রমাগত সাফাই গেয়ে গেছে যে, নিজেদের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব সেনা সদস্যদের ওপরই বর্তায়।

যেহেতু আমাদের ওপর সরাসরি আঘাত করা হয়নি, তাহলে কি এই সংঘাতে আমাদের যোগ দেওয়া উচিত? দুই পক্ষই ভেবেছিল, তাদের সেনা কর্মকর্তারা এমন একটা দোটানার মধ্যে থাকবেন। কিন্তু টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুবে থাকা মানুষ এত জটিলতা বোঝে না। তারা শুরু থেকেই এই কাদা ছোড়াছুড়ির একটাই অর্থ খুঁজে পেয়েছে; আর তা হলো যুদ্ধ। তাদের মতে, সমস্যার শুরু যাই হোক আর এর সমাধানের পথ যেদিকেই থাকুক, যুদ্ধের মাধ্যমে এর রফা করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। সাধারণ মানুষ হয়তো মনে করেছিল, অস্ত্রগুলোর একটা নির্দিষ্ট স্থায়িত্বকাল রয়েছে যা বেশিদিন অব্যবহার্য অবস্থায় ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে। কাজেই মূল্যবান অস্ত্রের অপচয় না করে শত্রুর ওপর তার কিছুটা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করলে লাভ ছাড়া ক্ষতি তো নেই! কিন্তু ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে পাকিস্তান ফেরত পাঠানোর পর সবারই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সামনেই ভারতের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকায় রাজনীতিবিদরা হয়তো এ সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করবেন। আমরা ৭০ বছর যাবৎ এই এক ইস্যুতে যুদ্ধ করে আসছি, আর এখন আরেকবার যুদ্ধ শুরু হলে তা কত দিনে শেষ হবে, সে বিষয়েও আমরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন এর শেষ কোথায়। পরিস্থিতি এ পর্যায় পর্যন্ত কীভাবে এলো তা একটু খতিয়ে দেখার চেষ্টা করি আমরা। পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর হামলায় ৪০ জন নিহত হওয়ার পর ভারত সরকারের ওপর বেশ চাপ তৈরি হয় ওই ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনো যেই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর আরও বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেনÑ তা হলো, জনসমর্থন অর্জন করে আসন্ন নির্বাচনে জেতার উদ্দেশ্যেই তিনি এ অভিযানে সম্মতি দিয়েছেন কিনা। তবে ভারত সরকার বলছে, আক্রমণ করা ছাড়া পাকিস্তানকে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের আর সব রাস্তা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ রকম একটা ধারণা আছে যে, এ অভিযানের সম্মতি না দেওয়া হলে নরেন্দ্র মোদির বুকের পাটা কতটুকুÑ তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে যেত। তবে কয়েকজন সামরিক বিশেষজ্ঞ এমনও প্রশ্ন তুলেছেনÑ এ অভিযানের ধারাবাহিকতায় দুই দেশের মধ্যে আরও বড় কোনো সংঘাতের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি নিয়ে সরকার কতটুকু চিন্তা করেছিল। এ মুহূর্তে অবশ্য ধীরে ধীরে উত্তেজনা প্রশমিত হচ্ছে। কাজেই আক্রমণের চূড়ান্ত অনুমতি দেওয়ার আগে ওই সিদ্ধান্তের ফলে একটি পরমাণু যুদ্ধ শুরু হতে পারত কিনা সে বিষয়ে নেতারা কতটা ওয়াকিবহাল ছিলেন? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমরা কিছুদিনের মধ্যেই পেতে শুরু করব। আরও একটি প্রশ্ন উঠছে। তা হলো, এখন পর্যন্ত বিজয়ী আসলে কারা? নাকি এখন ‘ম্যাচ ড্র’ হয়েছে বলা চলে?

ভারত সরকার যেদিন বালাকোটে আক্রমণের বিস্তারিত জানায়, সেদিন সবাই মনে করেছিল, এবারের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির জয় একরকম নিশ্চিতই হয়ে গেল। ভারতের কাছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশ্বাসযোগ্যতাও এখন অনেকটাই প্রশ্নের মুখে। ভারত এখন ইমরান খানের একটি বিষয়ই আমলে নেবে। তা হলো, ভারতে হামলাকারী জঙ্গিদের দমনে তিনি কী ভূমিকা নেন। কিন্তু কাশ্মীরে আরেকটি রক্তক্ষয়ী হামলা হলে পরিস্থিতি কী হতে পারে, সে বিষয়ে কেউই কথা বলছে না। একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বলছিলেন, যুদ্ধে উত্থান-পতন থাকবেই। যুদ্ধের সময় কোনো পক্ষেরই উচিত নয় অতি দ্রুত হতাশ হওয়া অথবা বিজয় উদ্যাপন করা। বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ খবর