সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

তৃণমূলকে টক্কর দিতে যোগ্যতম প্রার্থী খুঁজতে মরিয়া বিজেপি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

তৃণমূলকে টক্কর দিতে যোগ্যতম প্রার্থী খুঁজতে মরিয়া বিজেপি

সামনেই ভারতে লোকসভা নির্বাচন। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দেশটিতে নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান টার্গেট পশ্চিমবঙ্গ। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ইতিমধ্যেই রাজ্যটি (মোট আসন ৪২) থেকে কমপক্ষে ২৩টি আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে টক্কর দিতে সঠিক ও যোগ্যতম ব্যক্তিদেরই এবারে প্রার্থী করতে চাইছে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতারা। দলীয় সূত্রে খবর, কোনো প্রার্থীকে টিকিট দিলে জয়ের সম্ভাবনা বেশি, এলাকায় সেই প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, কোনোরকম বিতর্ক আছে কিনা- সব বিষয় মাথায় রেখে গত প্রায় দেড় মাস ধরে প্রতিটি জেলা এবং লোকসভা কেন্দ্রের অধীন বুথ পর্যায়ে জরিপ চালাচ্ছে রাজ্য বিজেপি। অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও পৃথকভাবে স্বাধীন জরিপ চালাচ্ছে। জানা গেছে, রাজ্যটির উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের কেন্দ্রে এক-একটি আসন লড়াইয়ের জন্য ৬০-৭০ জন তালিকায় রয়েছেন। তাছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সংসদ সদস্য সৌমিত্র খান কিংবা অভিনেতা মৌসুমী চ্যাটার্জি, বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি বা সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা ভারতী ঘোষের মতো ব্যক্তিরাও বাংলা থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য দরবার করেছেন বলে জানা গেছে। সবমিলিয়ে এদের মধ্য থেকে যোগ্যতম প্রার্থীকে বাছতেই ঘাম ছুটছে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের।

বিজেপির রাজ্যস্তরের এক নেতার অভিমত, ‘এটা সত্যিই নজিরবিহীন ঘটনা যে, কিছু আসনে বিপুল সংখ্যায় আবেদন জমা পড়েছে। দশ বছর আগেও আমাদের টিকিটে লড়াই করার জন্য মানুষকে বোঝাতে হতো।’

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও দলের সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় জানান, ‘নির্বাচনে প্রার্থীদের জেতার ক্ষমতা এবং কোন কেন্দ্রগুলোতে জয় আসবে, তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের এজেন্সি দিয়ে জরিপ করা হয়েছে। প্রার্থীর নির্বাচনে জয়ের ক্ষমতা ও তার জনপ্রিয়তার নিরিখেই প্রার্থী নির্বাচন ঠিক করা হবে।’ যদিও তার অভিমত, ‘বিজেপি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ দল এবং একবার দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গেলে, তাদের জয় নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক সদস্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন।’ দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্যের প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্র থেকেই প্রথম তিনজনের নাম পাঠানো হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। এরপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, ‘আমাদের দল প্রতিটি কেন্দ্রের সমান গুরুত্ব দেবে, তা সত্ত্বেও আমাদের লক্ষ্য কমপক্ষে ২৩টি আসনে জয়লাভ করা।

 আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ২৩টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন, কিন্তু নির্বাচন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তবে ২৬টি আসনেও জিততে পারি।’ যদিও দলের রাজ্য শাখা ইতিমধ্যেই লোকসভার আসনগুলোকে গুরুত্বের (জয়ের দিক থেকে) বিচারে ‘এ-প্লাস,’ ‘এ,’ ‘বি’, এবং ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। এ ব্যাপারে নাম না জানানোর শর্তে দলেরই এক রাজ্যস্তরের নেতা জানান, ‘পাঁচটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এবার লোকসভার আসনগুলোকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি, জনসংখ্যাগত পরিস্থিতি (হিন্দু-মুসলিম-হিন্দু উদ্বাস্তু), সাংগঠনিক দুর্বলতা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রার্থীর জয়ের ক্ষমতা। তবে দার্জিলিং এবং আসানসোল-রাজ্যের এই দুইটি লোকসভার আসনকে এই হিসাবের মধ্যে রাখা হয়নি, কারণ দলের অভিমত এবারও তারা এই আসন দুইটিকে নিজেদের দখলে রাখতে পারবে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয় পায় ৩৪টি, কংগ্রেস চারটি, বিজেপি ও সিপিআইএম উভয়েই দুটি করে আসন জয়লাভ করে।

বিজেপির এক নেতা জানান, ‘উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে আমরা ১৮-২০ আসন চিহ্নিত করেছি, যেখানে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা ৭০-৮০ শতাংশেরও বেশি। সাম্প্রতিককালে কয়েকটি নির্বাচনে আমাদের দলের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের এই জরিপ।’

সর্বশেষ খবর