রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
লোকসভা নির্বাচন-২০১৯

তৃণমূলের নতুন লোগোয় মুছে গেল কংগ্রেস

তৃণমূলের নতুন লোগোয় মুছে গেল কংগ্রেস

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। যার বয়স হতে চলল ২১। পুরো দস্তুর ‘তরুণ’ বলা যায়। সপ্তাহ তিনেক পরেই ভারতের লোকসভা বা কেন্দ্রীয় নির্বাচন। তার আগেই তৃণমূল কংগ্রেস তার চিরাচরিত লোগো পরিবর্তন করেছে। আর নতুন এই লোগোতে পুরোপুরি মুছে দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস লেখাকে। ভারতের জাতীয় পতাকাকে বলা হয় তেরঙা। সেই তেরঙার দাপট ঘুচিয়ে নীল-সাদা আভা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে জোড়াফুল প্রতীকটাকে ঘিরে। বাড়ানো হয়েছে সবুজ রঙের উপস্থিতি। আর খসে গিয়েছে ‘কংগ্রেস’ শব্দটা। মোটা হরফে একটাই শব্দ তৃণমূল। তার নিচে লেখা হয়েছে ‘আমার, আপনার, বাংলার’। ১৯৯৮ সালে দলের আত্মপ্রকাশের সময়ে লোগো তৈরি হয়েছিল যাঁর হাতে, নতুন লোগোর নেপথ্যেও কিন্তু সেই মমতা ব্যানার্জিরই মস্তিষ্ক। সে কাজে তাঁকে সাহায্য করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সচেতন ভাবেই যে বদলানো হয়েছে দলের লোগো, সে বিষয়ে তৃণমূলের প্রায় সব স্তরই কিন্তু ওয়াকিবহাল। ফলে গ্রাম-গ্রামান্তরেও প্রচারে-লিখনে নতুন নকশা ব্যবহার করতে ভুল হচ্ছে না কর্মীদের। নতুন লোগোয় সর্বাগ্রে চোখে পড়ে দলের লোগো থেকে ‘কংগ্রেস’ শব্দটার হারিয়ে যাওয়া। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু কংগ্রেসের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার তিনি ছাড়েননি। দলের নামে এবং প্রতিটি শাখা সংগঠনের নামে কংগ্রেসের সদর্প উপস্থিতি ছিল। বাংলায় তৃণমূলটাই আসল কংগ্রেস জোর গলায় এ কথাও বলা হতো। কিন্তু এখন কংগ্রেসকে ছাড়িয়ে অনেক উপরে চলে গেছে মমতার তৃণমূল। তৃণমূল যে এখন একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজনীতির নাম, তৃণমূল যে এখন একটা স্বতন্ত্র অস্তিত্ব, যে অস্তিত্বের সর্বাধিনায়িকার নাম সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রিত্বের চর্চাতেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক সে কথাই বুঝিয়ে দিতে চান তৃণমূল নেতৃত্ব বরং।

ভারতে কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে কংগ্রেসকে ছাপিয়ে যেতে পেরেছেন এমন নেতা বা নেত্রী বিরল। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি কিন্তু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। আনন্দবাজার

 শুধু পালে বাতাস টানতে পারা নয়, নিজের রাজ্যে কংগ্রেসকে বহু যোজন পিছনে ফেলে দিয়েছেন তিনি।

শারদ পওয়ারের মতো দুঁদে রাজনীতিক কংগ্রেস ভেঙে এনসিপি তৈরি করেছিলেন। পওয়ারের নিজের রাজ্য মহারাষ্ট্রে তাঁর দল সাফল্য পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু এনসিপি কখনো মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের চেয়ে বড় দল হয়ে উঠতে পারেনি। বরং অধিকাংশ সময়টাতেই কংগ্রেসের জোটসঙ্গী হয়ে থেকেছে। জাতীয় রাজনীতিতে তাদের কংগ্রেস ঘনিষ্ঠতা আরও বেশি করে চোখে পড়েছে। ১৯৯৬ সালে তামিলনাড়–তে কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হয়েছিল তামিল মানিলা কংগ্রেস। নেতৃত্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা জি কে মুপানর। সঙ্গে আর এক হেভিওয়েট কংগ্রেসি পি চিদম্বরম। ডিএমকের সঙ্গে জোট গড়ে তামিলনাড়–র রাজনীতিতে কয়েক বছরের জন্য ছাপ ফেলেছিল সে দল। কিন্তু এক দশকের মধ্যেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে তামিল মানিলা কংগ্রেস। হিমাচল প্রদেশে সুখরামের ‘হিমাচল বিকাশ কংগ্রেস’, হরিয়ানায় ভজনলালের ‘হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেস’ বা ছত্তীসগড়ে অজিত যোগীর ‘জনতা কংগ্রেস ছত্তীসগড়’ও বারবার অসাফল্যের মুখ দেখেছে, কংগ্রেসের উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি এরা কেউই। মমতা ব্যানার্জিই একমাত্র নেত্রী যিনি নিজের রাজ্যে কংগ্রেসি রাজনীতির প্রধান উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন অত্যন্ত উজ্জ্বল ভাবে। তবে বৈদ্যুতিক ভোটযন্ত্রে দলের নতুন লোগো দেখা যাবে না। সেখানে সাদা-কালো জোড়াফুলই থাকবে। নির্বাচনে কতটা ছাপ ফেলে নতুন লোগোর বার্তা, ২৩ মে মেলবে সে উত্তর। আনন্দবাজার

সর্বশেষ খবর