বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ ফাঁস

আগামী মাসে এই চুক্তিটি প্রকাশ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে

ইসরায়েল সরকার সমর্থিত জাতীয় দৈনিক হাইয়ুম মঙ্গলবার একটি নথি প্রকাশ করেছে। সেই নথিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্বাক্ষরিত কথিত ‘শান্তি’ চুক্তি। দুই দেশের পক্ষ থেকে চুক্তিটিকে ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও তার মুখপত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় দৈনিক হাইয়ুম সেই নথি প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল কিংবা ফিলিস্তিন হাইয়ুমের প্রকাশিত ওই চুক্তির সত্যতা নিশ্চিত করেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ওই চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছেন। দুই দেশের পক্ষ থেকে এর নাম দেওয়া হয়েছে ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি বা শতাব্দীর  সেরা চুক্তি।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আগামী মাসে এই চুক্তিটি প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। ইসরায়েলের ওই দৈনিকটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোই হবে চুক্তিটির মূল দফা।

১. চুক্তি : ইসরায়েল, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগঠন (পিএলও) এবং হামাসের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফিলিস্তিনিদের দেশ হিসেবে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ‘নিউ ফিলিস্তিন’ নামে একটি দেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। ফিলিস্তিন নামে আর কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না।

২. ভূমির ওপর সার্বভৌমত্ব : চুক্তি অনুযায়ী, গাজা উপত্যকা, জিহুদিয়া পার্বত্য এলাকা এবং পশ্চিম তীরের সামারিয়া এলাকা নিয়ে ‘নিউ ফিলিস্তিন’ নামে রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতিগুলোর ওপর তার কোনো সার্বভৌমত্ব থাকবে না। এসবের সার্বভৌমত্ব থাকবে ইসরায়েলের হাতে।

০৩. জেরুজালেম : জেরুজালেম নগরী নিয়ে কোনো ভাগাভাগি হবে না। বরং এটি হবে নিউ প্যালেস্টাইন ও ইসরায়েল উভয় দেশের রাজধানী। নগরীর আরব বাসিন্দারা নিউ প্যালেস্টাইনের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। আর ইহুদিরা ইসরায়েলি নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাস করবেন। ইহুদিরা আরবদের ঘরবাড়ি কিনতে পারবে না। আরবরাও ইহুদিদের বাড়িঘর কিনতে পারবে না। জেরুজালেমে নতুন আর  কোনো এলাকা দখল করা হবে না। পবিত্র স্থানগুলোর বিদ্যমান অবস্থা বজায় থাকবে।

 ০৪. জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ : উভয় দেশের অখ  রাজধানী জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরায়েলের জেরুজালেম পৌরসভার হাতে। তবে সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। ইসরায়েলের  জেরুজালেম পৌরসভার কাছে ট্যাক্স ও পানির বিল সরবরাহ করবে নিউ প্যালেস্টাইন।

০৫. গাজা : ফিলিস্তিনে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য মিসর নতুন জমি দেবে। কলকারখানা নির্মাণ, বাণিজ্যিক ও কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্যও নতুন ভূখ  দেবে মিসর। তবে ফিলিস্তিনিরা এখানে বসবাসের সুযোগ পাবেন না। লিজ বাবদ মিসরকে মূল্য পরিশোধ করবে নিউ ফিলিস্তিন।

০৬. সহযোগী দেশ : চুক্তির বাস্তবায়ন করতে আর্থিক সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট,্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো। নয়া ফিলিস্তিনের বেশ কিছু জাতীয় প্রকল্পে ৩০০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেবে তারা।

০৭. সশস্ত্র বাহিনী : নয়া ফিলিস্তিন কোনো সেনাবাহিনী গঠন করতে পারবে না। শুধু দেশটির পুলিশকে হালকা কিছু অস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়া হবে। তাছাড়া ইসরায়েল এবং নয়া ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। সেই চুক্তির আওতায় দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ইসরায়েলকে নিয়মিত হারে অর্থ পরিশোধ করবে নয়া ফিলিস্তিন। মধ্যস্থতাকারী সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে এ অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।

০৮. চুক্তিটি কার্যকর করার শর্তাবলি : ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগঠন হামাস ব্যক্তিগত অস্ত্রসহ তাদের সব অস্ত্র মিসর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে। হামাসের  নেতাসহ তাদের দলের সদস্যদের সবাই নয়া ফিলিস্তিন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত সহযোগী দেশগুলোর কাছ  থেকে নিয়মিত হারে ‘বেতন’ পাবে। গাজা উপত্যকার স্থল ও সমুদ্রসীমা উন্মুক্ত রাখা হবে। যেখান দিয়ে ইসরায়েল এবং মিসরের মানুষের চলাচলসহ অবাধে পণ্য পরিবহন করা যাবে। বর্তমানে জুয়েদা ও সামারিয়ার মধ্যে যেমন প্রক্রিয়া বিদ্যমান ঠিক  সেরকম। রাষ্ট্র গঠনের এক বছরের মধ্যে নয়া ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। দেশের যে কোনো নাগরিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। নির্বাচনের এক বছর পর থেকে ইসরায়েল যেসব ফিলিস্তিনি বন্দী আছেন তিন বছর অন্তর ধীরে ধীরে সবাইকে মুক্ত কওে দেওয়া হবে।

মিডল ইস্ট মনিটর জানিয়েছে, এর আগে ট্রাম্পের পরিকল্পনা মেনে নিতে না পারলে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হাওম ডেইলি জানিয়েছে, সৌদি আরবসহ এ অঞ্চলের চারটি দেশ ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামের ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে। বাকি দেশগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও জর্ডান।

সর্বশেষ খবর