শিরোনাম
শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

মোদি-মমতা দ্বৈরথে ফের জমে উঠল প্রচারণা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মোদি-মমতা দ্বৈরথে ফের জমে উঠল প্রচারণা

একজন ফের ভারতের ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া। অন্যজন তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে প্রাণপণ লড়াই চালাচ্ছেন। দেশটির জাতীয় রাজনীতির দুই মেরুর এই রাজনীতিদ মোদি ও মমতার দ্বৈরথে ফের জমে উঠেছে লোকসভার নির্বাচনী প্রচারণা।

সাত পর্বের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে বেশির ভাগ আসনে ভোট গ্রহণ শেষ। বাকি রয়েছে মাত্র ১৭টি আসন, ভোট আগামী ১২ মে (৮ আসন) ও ১৯ মে (৯ আসন)।

গতকাল পশ্চিমবঙ্গে দুটি প্রচারণায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চারটি জনসভা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। বাঁকুড়ার ও পুরুলিয়ায় দুটি নির্বাচনী জনসভায় মমতার গালিগালাজ, দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, কয়লা মাফিয়াসহ নানা ইস্যুতে তাকে তোপ দাগেন মোদি।

তিনি বলেন, লোভী দিদিই এই বাংলাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। মোদি বলেন, ‘অস্তিত্ব রক্ষার নেশায় উনি প্রথমে বাংলার ক্ষতি করেছেন এখন তার সেই অস্তিত্ব চলে যাওয়ার ভয়ে বাংলাকে আরও ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। মা-মাটি-মানুষের দিকে ওনার খেয়াল নেই, বরং ওনার নজর নিজের ক্ষমতা, আত্মীয়, ভাতিজা এবং তোলাবাজদের দিকেই।’ গত মঙ্গলবার পুরুলিয়ার একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঠাসিয়ে গণতন্ত্রের থাপ্পড় মারার কথা বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। মমতার ওই মন্তব্যকে ঘিরে যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়। এমনকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও টুইট করে মমতার সমালোচনা করেন।

দুই দিন পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিদি কতটা সমস্যায় আছেন সেটা তার শব্দ প্রয়োগেই বোঝা যায়। উনি এখন পাথর, থাপ্পড়ের কথা বলছেন। কিন্তু দিদি, আমার গালি খাওয়ার অভ্যাস আছে, ডিকশনারিতে যত গালি আছে সব হজম করার মতো শক্তি গ্রহণ করেছি। কিন্তু আপনি ওই গালির মধ্যে দেশের সংবিধানকে অপমান করছেন।’ 

মোদি আরও বলেন, ‘উনি (মমতা) মোদিকে থাপ্পড় মারবেন। কিন্তু  মমতা দিদি-আমি আপনাকে দিদি বলে সম্বোধন করি, আপনাকে  আদর করি।

 আপনার ওই থাপ্পড় আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে যাবে। আমি সেটাও মেনে নেব। কিন্তু দিদি, আপনি যদি চিটফান্ডের রুপি লুট করেছে ও যারা গু ামি তোলাবাজের সঙ্গে যুক্ত-তাদের থাপ্পড় মারার সাহস দেখাতেন-তবে আপনার অবস্থা আজ এরকম হতো না। তৃণমূল তোলাবাজি ট্যাক্স আপনার এই সর্বনাশ করত না।’

বিষয়টি অনুধাবন করেই মমতা বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরুলিয়ার শিমুলিয়ায় একটি জনসভায় বলেন, ‘মোদি বলেছেন আমি নাকি তাকে থাপ্পড় মারব। আরে ওটা গণতন্ত্রের থাপ্পড়। কথাটা ভালো করে বুঝুন। আমি কেন আপনাকে থাপ্পড় মারতে যাব। আমি থাপ্পড় মারার লোক নই। আমি গণতন্ত্র বুঝি। মানুষই ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রের থাপ্পড় দেবে। ভালো করে বুঝুন!’

পাথরের মিষ্টি প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘আমি আপনাকে পাথর মারব কেন, আমি তো আপনাকে মিষ্টি খাওয়াব বলেছি, সেটা মাটির মিষ্টি। ওর মধ্যে কিশমিশ, কাজুর বদলে লাল কুচির পাথর দিয়ে দেব ... খেলেই দাঁত ভাঙবে। আপনাকে পাথর মারার কী প্রয়োজন? আপনাকে তো পাঁচ কোটি লোক, এসপিজি ঘিরে বসে আছে। আপনি ৪০৫ বছর বাঁচুন। আমি আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।’

নরেন্দ্র মোদির অভিযোগ ছিলÑ ‘দিদি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলেও তিনি পেছনে থেকে দাদাদারি চালাচ্ছেন। শাসন ক্ষমতা তৃণমূলের থাকলেও দিদির কারবার জগাই-মাধাই চালাচ্ছেন। মোদি বলেনÑ ‘এই এলাকায় কয়লা খনিতে তৃণমূলের মাফিয়া রাজ কেমন চলছে তা আপনারা সবাই ভালো জানেন। এখানকার কয়লা খনি থেকে তৃণমূলের নেতারা রুপি লুটছে অথচ খনির শ্রমিকরা তাদের মজুরি পাচ্ছে না। মোদি তৃণমূলের এসব অত্যাচারের কথা বললেই দিদির প্রচ  রাগ হয়। কিন্তু মমতার ওই রাগকে মোদি পাত্তা দেয় না। কারণ ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের ভালোবাসা মোদির সঙ্গে রয়েছে।’

মমতার পাল্টা চ্যালেঞ্জÑ মোদিবাবু যদি এ রাজ্যে আমার ৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে একজনকেও কয়লা মাফিয়া প্রমাণ করে দিতে পারেন তবে আমি ৪২ জনের প্রার্থীপদই প্রত্যাহার করে নেব। আর তুমি যদি মিথ্যা কথা বলো তবে জনগণের সামনে ১০০ বার কান ধরে উঠবোস করতে হবে।’

মমতার প্রশ্নÑ কয়লা মন্ত্রণালয় কার অধীনে? ওখানকার মন্ত্রী কে? সেখানে কারা পাহারা দেয়? সবকিছুই যখন মোদির সরকারের, তোমার ক্যাডাররা করে খায়-আর তুমি বলছো তৃণমূল কংগ্রেস রুপি খায়। তোমাকে এর জবাব দিতে হবে।’

বিজেপিকে জবাব দিতেই এদিন ‘পেনড্রাইভ’ তত্ত্ব খাড়া করেন মমতা। মমতার অভিযোগÑ আমার কাছে একটা পেনড্রাইভ আছে, সেটা যদি বাজারে ছেড়ে দিই তবে গরু পাচারের ঘটনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপি সাংসদ, নেতাদের জড়িত থাকার ঘটনা সামনে চলে আসবে।’

মমতা বলেন, ‘তিনি (মোদি) বাংলা মাটি চেনেন না। তিনি কি জানেন বাঁকুড়ার ঘরের ছেলেমেয়েরা কতটা শিক্ষিত, উন্নত মানুষ তৈরি হয়। কিন্তু আপনি কি কখনো নিজেকে তৈরি করতে পেরেছেন? হাফ প্যান্ট পরে তো আরএসএস করে বেড়াতেন। এখন হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। তোমার মতো নেতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে? একজন কাউন্সিলর হওয়ার যোগ্যতা ছিল না, রুপি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছে।’

মমতার আত্মীয়, ভাতিজা নিয়ে মোদির করা মন্তব্যের পাল্টা দিতে গিয়ে মমতা বলেনÑ ‘আমার পরিবার দেখিও না। আমার পরিবার মানুষের পরিবার। আমি একা লোক। তোমার পরিবারে তো বউ আছে, তার খবর রাখো? তুনি নিজের বউকে দেখো না, আর অন্যের পরিবার নিয়ে কথা বলো-লজ্জা করে না? আগামী ২৩ তারিখ বিজেপির মৃত্যুঘণ্টা বাজবে বলেও আগাম ঘোষণা দেন তৃণমূল প্রধান।

সর্বশেষ খবর