সোমবার, ২০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিজেপিবিরোধী জোট গঠনে বিরোধীদের ‘মহা’ প্রচেষ্টা

বিজেপিবিরোধী জোট গঠনে বিরোধীদের ‘মহা’ প্রচেষ্টা

শেষ দফার নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতে বিজেপিবিরোধী মহাজোট সরকার গঠনের উদ্যোগ জোরালো হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু, বহুজন সমাজবাদী পার্টির মায়াবতীসহ বেশকিছু বিরোধী দল ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিজেপিবিরোধী জোট গঠনকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এদিকে গতকাল শেষ দফা নির্বাচনের পর বিভিন্ন সংস্থার ভোট ফেরত জরিপে দেখা গেছে এবারও সরকার গঠন করছে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে গতবারের মতো এবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না দলটি। সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সহযোগিতা নিতে হবে।

অপরদিকে ২৩ মে নির্বাচনী ফল ঘোষণার আগে ২১ মে’র সম্ভাব্য বৈঠক সামনে রেখে বিজেপিবিরোধী দলগুলোকে কাছে আনার চেষ্টা জোরালো করেছেন নাইডু। বৃহত্তর  জোট গঠনের লক্ষ্যে কমিউনিস্ট পার্টি, আম আদমি পার্টিসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলোও থাকছে সেই ঐক্য প্রক্রিয়ায়। তবে বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসকেও বিরোধী জোট গঠন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে কেউ কেউ। এদিকে সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এনডিটিভি জনিয়েছে, নাইডু  ৮ মে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন আর ২১ মে বিরোধী দলগুলোর বৈঠক ডাকায় একমত পোষণ করেন। দক্ষিণ ভারতে সক্রিয় তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান নাইডু বলেছেন, গেরুয়া (বিজেপির পতাকার রং) দল বিরোধী যে কোনো দলকেই বৃহত্তর জোটে স্বাগত জানানো হবে। শুক্রবার তিনি ইঙ্গিত দেন প্রয়োজনে নিজেদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) সঙ্গেও জোট গঠন করবেন।  শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তরফে নাইডুর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে সক্রিয় টিআরএস যদি কংগ্রেস  নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয় তাহলে কী হবে? জবাবে নাইডু বলেন, ‘আমরা কেবল টিআরএস-কে নয়, বিজেপি বিরোধী যে কোনো দলকেই স্বাগত জানাব।

এ ধরনের সব দলকেই আমাদের বৃহত্তর জোটের অংশ হতে স্বাগত জানাব। তিনি বলেন, আমি সবার সঙ্গেই বৈঠক করছি। সব নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর একটি পরিকল্পনা সাজিয়ে  ফেলব।’

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে টিডিপি প্রেসিডেন্ট নাইডু নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম মেশিন নিয়ে ওঠা সমালোচনা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন তিনি। নাইডু বলেন, ‘আমি গত ২৫ বছর ধরে দলের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু  এ ধরনের কমিশন কখনোই দেখিনি’। ‘নির্বাচনের পুরো সময় জুড়ে তারা সরকারকে সমর্থন করে গেছে এটা দুঃখজনক, বলেন তিনি।

মহাঐক্যের এই পরিকল্পনায় শরিক হবে না বলে জানিয়েছে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস)। প্রেসিডেন্ট চন্দ্রশেখর রাও এর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আইন প্রণেতা বিনোদ কুমার জানিয়েছেন, নির্বাচনের ফল পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করতে আগামী ২১ মে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের অংশ হবে না টিআরএস। বিনোদ কুমার বলেন, চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে  কোনো বৈঠকের অংশ হতে পারব না আমরা। এটা খুবই পরিষ্কার। বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট গড়ার চেষ্টায় মূল ভূমিকা পালন করছেন নাইডু। তবে তার এই ভূমিকাকে ‘স্বঘোষিত’ বলে দাবি করেন বিনোদ কুমার।

 এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা নিবন্ধে দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেছেন, রাজনৈতিক বাস্তবতা অনুযায়ী কংগ্রেসকে বাদ রেখে শুধু আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে জোট বেঁধেও অন্তত ২৭২ আসন নিয়ে সরকার গঠন যেমন কঠিন, তেমনই কংগ্রেস এবং তার ইউপিএ শরিকরা মিলে ২৭২ আসন জিতে সরকার গড়তে পারবে তেমনটাও এখনই জোর দিয়ে বলা যায় না। তাই মোদিকে হারিয়ে বিকল্প একটি সরকার গড়তে হলে কংগ্রেসের সঙ্গে অন্য বিজেপিবিরোধী আঞ্চলিক দলগুলোর ‘মহাগঠবন্ধন’ই যে একমাত্র পথ, অচিরেই সেই উপলব্ধি হলো সবার।

সর্বশেষ খবর