মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

হুমকি-ধমকির পাশাপাশি চলছে সমঝোতার চেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরিস্থিতি

ইরানের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটারের ওপর সাইবার হামলা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র দুই পন্থা অবলম্বন করে অগ্রসর হচ্ছে। একদিকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হলেও আরেকদিকে চলছে উত্তেজনা কমানোর কূটনৈতিক প্রয়াস। এরই অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। গত রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও যুদ্ধের বিপক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ নয়, বরং চলমান সংকট নিরসনে ইরানের সহায়তা চায় যুক্তরাষ্ট্র।’

 

সাইবার হামলা ব্যর্থ : ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র  যে সাইবার হামলা চালিয়েছেÑ তা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান। ইরানের টেলিকম-মন্ত্রী গতকাল এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে ইরানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ আজারি জাহরোমি বলেছেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অনেক পরিশ্রম করেছে। কিন্তু তাদের হামলা সফল হয়নি। এই হামলা ছিল সাইবার সন্ত্রাসবাদ।’

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও সমঝোতার ইঙ্গিত : গত সপ্তাহে ইরান মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, যুদ্ধ হলে তাদের (ইরানের) এমন অবস্থা হবে যা কেউ এর আগে কখনো দেখেনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজে এ কথা বলেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়- তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনিকে সরাসরি কী বার্তা দিতে চান? জবাবে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান না, কিন্তু সামরিকভাবে মুখোমুখি হলে ইরান কোনো সুযোগই পাবে না। তিনি তেহরানকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘আমি কোনো যুদ্ধ চাই না, তবে যদি সেটা হয় তাহলে এমন কিছু ঘটবে যা আপনি জীবনে কখনো দেখেননি। কিন্তু আমি সেটা করতে চাই না কিন্তু আপনি কোনো পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবেন না। আপনি (ইরান) যদি আলোচনা চান তাহলে ভালো। অন্যথায় আপনার (ইরানের) আগামী তিন বছরের অর্থনৈতিক অবস্থার শোচনীয় হবে।’ আলোচনা নিয়ে ওয়াশিংটনের কোনো পূর্বশর্ত আছে কি না ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘না আমি ওটা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। কোনো পূর্বশর্ত নেই।’ ট্রাম্প আরও জানান যে, তিনি ইরানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। আর তা না হলে তাদের আগামীতে অনেক বছর অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হবে।’

এর আগে ইরানের এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘পারস্য অঞ্চলে যে কোনো সংঘর্ষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যার ফলে এ অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।’ তার এ হুঁশিয়ারির জবাবে গত রবিবার যুদ্ধের বিপক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ নয়, বরং চলমান সংকট নিরসনে ইরানের সহায়তা চায় যুক্তরাষ্ট্র।’

পম্পেও যাচ্ছেন সৌদি-আমিরাত : ইরান সংকট নিয়ে আলোচনা করতে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। রবিবার এক বিবৃতিতে পম্পেও জানিয়েছেন, ইরানে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার বিষয়টি নিয়ে তিনি সৌদি এবং আমিরাতের সঙ্গে আলোচনা করবেন। পম্পেও বলেন, ‘আমরা কৌশলগত বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলব। কীভাবে ইরানের বিরুদ্ধে একটি বৈশ্বিক জোট তৈরি করা যায়- সে বিষয়টি নিশ্চিত করব আমরা।’

যুদ্ধবাজ ‘বি-টিম’ : ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, আরেকটু হলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফাঁদে ফেলে দিচ্ছিল বি-টিম। জারিফ বিশ্বের চারজন যুদ্ধবাজ রাজনীতিককে ‘বি-টিম’ বলে অভিহিত করেন যাদের নামের আদ্যাক্ষর ইংরেজি ‘বি’ দিয়ে শুরু হয়েছে। ওই চার যুদ্ধবাজ রাজনীতিক হলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন জায়েদ এবং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার তার অফিশিয়াল টুইটার পেজে লিখেছেন, মার্কিন ড্রোন ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন, গানবোট ক্রয় এবং ইরানকে তেল ট্যাংকারে হামলার জন্য দায়ী করে টেলিফোন সংলাপ ইত্যাদি প্রমাণ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুদ্ধের ময়দানে প্রায় নামিয়ে দিয়েছিল বি-টিম। কিন্তু ট্রাম্প সতর্কতা অবলম্বন করে সম্ভাব্য যুদ্ধ প্রতিহত করেছেন।

সর্বশেষ খবর