বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

লিবিয়ায় অভিবাসী শিবিরে বিমান হামলায় নিহত ৪০

লিবিয়ায় অভিবাসী শিবিরে বিমান হামলায় নিহত ৪০

বোমা হামলার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় অভিবাসী কেন্দ্রটি -এএফপি

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির বাইরে একটি অভিবাসী বন্দী শিবিরে হামলায় অন্তত ৪০ জন অভিবাসী নিহত হয়েছেন। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা এই খবর জানিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৮০ জন। জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার বলছে, বিমান হামলার কারণে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ হামলার জন্য সাবেক জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন স্বঘোষিত লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে (এলএনএ) দায়ী করেছে লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত জাতীয় ঐকমত্যের সরকার (জিএনএ)। বিমান হামলাটি যেখানে হয়েছে সেই তাজৌরা এলাকায় জিএনএ-র অনুগত বাহিনীগুলোর সঙ্গে এলএনএ-র লড়াই চলছে। জিএনএ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘ব্যাপক বিমান হামলার’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এলএনএ সোমবার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এলএনএ-র এক মুখপাত্র অভিবাসী কেন্দ্রে তাদের হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছে।

নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকা অঞ্চলের বাসিন্দা। লিবিয়া থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন তারা। এখানকার সরকার পরিচালিত বন্দী শিবিরে হাজার হাজার অভিবাসীকে আটকের পর রাখা হয়। যেগুলোর বেশিরভাগই দেশটির সংঘাত-পূর্ণ এলাকাগুলোর কাছাকাছি অবস্থিত। ২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে অপসারণ ও হত্যার পর থেকেই সংঘাতের কারণে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

হামলা সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে? : জরুরি সেবা বিভাগের মুখপাত্র ওসামা আলী জানান, হামলার সময় তাজুরা বন্দী শিবিরে ১২০ জন অভিবাসী একটি হ্যাঙ্গারে অবস্থান করছিলেন। লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ডা. খালিদ বিন আত্তিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে তিনি বলেন, ‘প্রায় সব জায়গায় মানুষ ছিল। শিবিরটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যেখানে-সেখানে মানুষ কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। অনেকেই মানসিক আঘাতে হতবিহ্বল হয়ে গিয়েছিল। বিচ্ছিন্ন ছিল বিদ্যুৎ সংযোগও।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো এলাকা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আসার পর যা দেখলাম তা ভয়ঙ্কর ছিল। রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, হামলা সম্পর্কে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।

লিবিয়ায় যুদ্ধ কেন চলছে : কোনো কর্তৃপক্ষই লিবিয়ার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। চরমভাবে অস্থিতিশীল  দেশটির নিয়ন্ত্রণ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক এবং সামরিক গোষ্ঠীর হাতে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে একটি প্রধানমন্ত্রী সারাজের নেতৃত্বাধীন এবং অপরটি জেনারেল হাফতারের নিয়ন্ত্রণাধীন। গত এপ্রিলে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে  জেনারেল হাফতার। গত চার দশক ধরে লিবিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন জেনারেল হাফতার। ১৯৮০-এর দশকে মতবিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনের আগ পর্যন্ত গাদ্দাফির কাছের মিত্র ছিলেন তিনি। ২০১১ সালের আন্দোলনের পর দেশে ফিরে পূর্বাঞ্চলে নিজের শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলেন তিনি। সমর্থন পান ফ্রান্স, মিসর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের।

লিবিয়ায় অভিবাসীরা কতটা অসহায় : লিবিয়ার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে সেখানে মানব পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আফ্রিকা অঞ্চলের অভিবাসীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে আটক ইউরোপগামী অভিবাসীদের বন্দী শিবিরগুলোর করুণ দশার চিত্র বারবারই তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

সর্বশেষ খবর