বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রত্যর্পণ বিলকে ‘মৃত’ বললেন লাম

প্রত্যর্পণ বিলকে ‘মৃত’ বললেন লাম

ক্যারি লাম

অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে লাগাতার বিক্ষোভ ও সংঘাতের মধ্যে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বলেছেন, বিলটি এখন মৃত। তবে এমন বক্তব্যের ফলে বিলটি সম্পূর্ণ বাতিল হলো কিনা, তা নিয়ে এখনো সন্দিহান আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যারি লাম বলেন, ‘বিলটি নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে অব্যাহত সন্দেহ বিরাজ করছে এবং এটি পুনরায় চালু হবে কিনা, তা নিয়ে আছে দুশ্চিন্তা। তবে আমি জোর দিয়ে বলছি, এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই। বিলটি মৃত।’ চীন ও তাইওয়ানের কাছে অপরাধী প্রত্যর্পণের জন্য একটি বিল পাসের উদ্যোগ নেওয়া হলে জুনের শুরুতে হংকংয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এই আইন পাস হলে চীন, তাইওয়ান ও ম্যাকাউ সরকারের আহ্বানে কোনো মামলায় অভিযুক্তকে ফেরত পাঠাতে পারবে হংকং। বর্তমান আইনে যে বিধান নেই। এরপর জুনের মাঝামাঝিতে বিলটি স্থগিতের ঘোষণা হংকংয়ের নেতা ক্যারি লাম দিলেও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। গত সপ্তাহের শুরুতে হংকংয়ের সংসদ ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। রবিবার রাতেও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার এসে বিলটি ‘মৃত’ বলে উল্লেখ করলেন লাম। তবে, বিলটি বাতিলের দাবি বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে এলেও তিনি ‘বাতিল’ শব্দ উল্লেখ করেননি। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ক্যারি লাম।

প্রত্যাবর্তন বিলটি পাস করার পক্ষে সরকারের যুক্তি ছিল, হংকং যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত না হয়, সে জন্যই এই আইন প্রয়োজন। বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রস্তাবিত আইনটিতে বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক মামলা এই আইনের আওতাভুক্ত হবে না। সরকার আরও দাবি করেছিল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদে র সঙ্গে এই প্রস্তাবিত আইন সঙ্গতিপূর্ণ। শুধু গুরুতর অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবিশেষকেই এই আইন প্রয়োগ করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বিবেচনা করা হবে।

কিন্তু আইনটির সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, এই আইনের কারণে স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলটির ৭৩ লাখ বাসিন্দা, এমনকি বিমানবন্দর ব্যবহারকারী ব্যক্তিবিশেষ চীনের সরকার প্রভাবিত আদালতের নির্দেশের আওতাভুক্ত হয়ে যেতে পারেন। উল্লেখ্য, ১৮৪১ সাল থেকে ব্রিটিশ কলোনির অধীন ছিল হংকং। প্রথম অপিয়াম যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের কাছে দ্বীপটি সমর্পণ করে দিয়েছিল চীন। পরবর্তীকালে ১৯৯৭ সালে সার্বভৌমত্ব অর্জনের পর ‘ওয়ান কান্ট্রি, টু সিস্টেম’ শর্তের আওতায় ফের চীনের কাছে হস্তান্তরিত হয় হংকং। এতে হংকং চীনের অধীনে থাকলেও তাদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত এটিই ছিল অঞ্চলটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের একটি।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা না করে এমন বক্তব্য দেওয়াকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনের সংগঠক জিমি শাম ও বনি লেউং। বিলটি পুরোপুরি বাতিল না করে ক্যারি লাম ‘শব্দের খেলা’ খেলছেন বলে অভিযোগ করেছেন হংকংয়ে ২০১৪ সালে আমব্রেলা মুভমেন্টের তরুণ সংগঠক জোসুয়া ওং। বিলটি সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি জানিয়ে এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘বিলটি মৃত বলে ক্যারি লাম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা হংকংয়ের জনগণ ও বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে আরেকটি মিথ্যা কথা। কারণ আগামী বছরের জুলাই পর্যন্ত সংসদের কার্যসূচিতে থাকছে বিলটি।’

সর্বশেষ খবর