মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাশ্মীরে আরও অস্থিরতার আশঙ্কা, স্কুলগুলো ফাঁকা

কাশ্মীরে আরও অস্থিরতার আশঙ্কা, স্কুলগুলো ফাঁকা

দিনকয়েক আগেও কোলাহলপূর্ণ ছিল কাশ্মীরের রাস্তাঘাট। এখন তা ফাঁকা। সেই ফাঁকা রাস্তায় পুলিশের অতন্দ্র প্রহরা -এএফপি

কাশ্মীর উপত্যকার প্রধান শহর শ্রীনগরের স্কুলগুলো খুললেও অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাড়িতে রেখে দেওয়ায় স্কুলগুলোর অধিকাংশ শ্রেণিতেই কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। গতকাল শ্রীনগরের স্কুলগুলো ঘুরে এমন দৃশ্য দেখেছেন বলে জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিকরা। তারা নগরের দুই ডজনের বেশি স্কুল পরিদর্শন করে শ্রেণিক্ষগুলো ফাঁকা ও সেখানে অল্প কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত আছেন বলে দেখতে পেয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বিলোপ করার ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের জেরে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শ্রীনগরের বাসিন্দারা। জম্মু ও কাশ্মীরে বড় ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ঠেকাতে সেখানে নজিরবিহীন বিধিনিষেধ জারি করেছিল ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ার পর শ্রীনগরের প্রায় ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলেছে। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম ছিল। একজন শিক্ষক বলেছেন, ‘এ রকম সহিংস পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে কীভাবে? সরকার ছোট ছোট শিশুদের কামানের গোলার মুখে ঠেলে দিয়েছে।’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চালু হলে সন্তানদের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখতে পারবেন তারা, তখন বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন, তার আগ পর্যন্ত তাদের সন্তানরা বাসায়ই থাকবে। শহরের বাতামাল্লো এলাকার একটি স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর বাবা গুলজার আহমদ বলেন, ‘কীভাবে আমরা সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি নেব?’ এর আগে বাতামাল্লো এলাকায় কয়েকবার ভারতবিরোধী প্রতিবাদ হয়। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহগুলোয় সৈন্যরা ছোট ছোট শিশুদেরও গ্রেফতার করেছে এবং কয়েকটি শিশু আহতও হয়েছে। বাড়ির ভিতরে শিশুরা নিরাপদ আছে। তারা স্কুলে গেলে কে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে?’ এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তৎক্ষণাৎ কর্তৃপক্ষগুলোর কাউকে পাওয়া যায়নি, তবে এর আগে যথেচ্ছ গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করেছিল তারা। ৫ আগস্ট এক ঘোষণায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে পুরোপুরি ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দেয়। সমালোচকরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত বহু কাশ্মীরিকে আরও দূরে ঠেলে দেবে এবং সেখানে ৩০ বছর ধরে চলা বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহ আরও জোরদার হবে। রবিবার শ্রীনগরের বাসিন্দারা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর ছুড়েছে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

কাশ্মীর সীমান্তে দুই পাকিস্তানি নিহত : সীমান্ত লঙ্ঘন করে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর লক্ষ্য করে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ছোড়া গুলিতে পাকিস্তানি দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত একজন। গতকাল পাকিস্তান সরকারের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলে সীমান্ত লঙ্ঘন করে গোলাবর্ষণ করেছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। গুলিতে দুজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। হিমালয় অঞ্চলের এ উপত্যকায় প্রায়ই দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মাঝে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে প্রতিবেশী চিরবৈরী দেশ দুটির মাঝে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে গত ৫ আগস্ট। ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। দুই দেশই পাল্টাপাল্টি পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়ে আসছে।

সর্বশেষ খবর