মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্রেক্সিটে ভয়াবহ অরাজকতার আশঙ্কা

গোপন সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে ব্রিটেনে ব্যাপক সংকট দেখা যেতে পারে। তবে সরকারের দাবি, দেশ স্বাভাবিক আছে। তারা যে কোনো পরিস্থিতি সামলানোর জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত। আর ব্রেক্সিট বিষয়ে কার্যকর আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী জনসন জার্মানি ও ফ্রান্স সফরে যাচ্ছেন দেশ দুটির প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। যে কোনো মূল্যে ৩১ অক্টোবর ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে নিয়ে যেতে চান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এই অবস্থানকে ঘিরে তিনি নৈরাশ্যের বদলে আশাবাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু ইইউর সঙ্গে কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ব্রিটেনের মানুষকে ঠিক কী মূল্য দিতে হবে, সে বিষয়ে এতকাল বিশেষজ্ঞদের কিছু সাবধান বাণী ছাড়া বিশেষ কিছু জানা যায়নি। এবার সেই সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিস্থিতির এক সামগ্রিক চিত্র উঠে এসেছে। দ্য সানডে টাইমসে এমন কিছু গোপন সরকারি নথিপত্র ফাঁস হয়েছে, যাতে একাধিক ক্ষেত্রে ঘাটতি ও তার পরিণাম তুলে ধরা হয়েছে?

‘অপারেশন ইয়েলোহ্যামার’ নামের এসব সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী চুক্তিহীন ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ব্রিটেনের অবকাঠামো জোরালো ধাক্কা খাবে। সে ক্ষেত্রে জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধপত্রের অভাব দেখা দেবে। শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গোটা দেশের বন্দরগুলোতে মালপত্র খালাসের কাজ থমকে যাবে। প্রায় ৮৫ শতাংশ ট্রাক ফ্রান্সের শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছ প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেশ করতে প্রস্তুত না হওয়ায় তিন মাস পর্যন্ত বন্দরের কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে। এই সমস্যার জের ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবের কারণে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভের আশঙ্কা রয়েছে। মোটকথা এসব রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রিটেনের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটতে বাধ্য।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্রেক্সিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মাইকেল গোভ জানিয়েছেন, গোপন সরকারি রিপোর্টের সঠিক ব্যাখ্যা করা হয়নি। তার মতে, সরকার চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে নানারকম সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম চিত্র সৃষ্টি করেছে। দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্রগুলোই তুলে ধরা হয়েছে। গত ৩ সপ্তাহে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার গতি আরও বাড়ানোর ফলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে বলে তিনি দাবি করেন। অতীতের তুলনায় সরকার এমন পরিস্থিতির জন্য অনেক বেশি প্রস্তুত। ফলে পুরনো এসব নথিপত্র এখন আর প্রাসঙ্গিক নয় বলে তিনি মনে করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি সূত্র অনুযায়ী, এক প্রাক্তন মন্ত্রী এসব নথিপত্র ফাঁস করে দিয়েছেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি ইইউর সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করতেই এমনটা করেছেন। এসব পুরনো রিপোর্ট এখন আর প্রাসঙ্গিক নয় বলে তিনিও দাবি করেন।

সরকার ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও সংসদ সদস্যরা গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ১০০ জনেরও বেশি সংসদ সদস্য একযোগে প্রধানমন্ত্রী জনসনকে চিঠি লিখে সংসদের আপদকালীন অধিবেশন আয়োজনের ডাক দিয়েছেন। তাদের মতে, দেশের এই কঠিন সময়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সংসদের অধিবেশন শুরু করে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তা চালু রাখা উচিত। একমাত্র এভাবেই সরকারের কাজকর্মের ওপর নজর রেখে সাধারণ মানুষের কণ্ঠ তুলে ধরা সম্ভব।

ক্ষমতায় আসার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন চলতি সপ্তাহে এই প্রথম জার্মানি ও ফ্রান্সের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি ইইউ নেতাদের ওপর নতুন ব্রেক্সিট চুক্তির জন্য চাপ বাড়াতে চান। তার মতে, ব্রিটেনের সংসদ ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারবে না। ইইউ অবশ্য এখনো পর্যন্ত এই প্রশ্নে সবরকম চাপ উপেক্ষা করে এসেছে। জনসনের বার্লিন ও প্যারিস সফরেও এই অবস্থান পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর