বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চীনে তিন অঞ্চলে স্বাধীনতাকামীদের প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের হুঁশিয়ারি

চীনে তিন অঞ্চলে স্বাধীনতাকামীদের প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের হুঁশিয়ারি

চীনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট হু জিনিতাও (বামে) ও জিয়াং জেমিন -এএফপি

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, দুনিয়ায় এমন কোনো শক্তি নেই যা এই মহান জাতিকে ঝাঁকুনি দিতে পারে। এ দেশের মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে চীনা জাতি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। সুতরাং এ জাতির অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। ১ অক্টোবর কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারে সামরিক প্যারেডে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হংকং, ম্যাকাও এবং তাইওয়ানের নাম না নিয়েই অঞ্চলগুলোর গণতন্ত্রপন্থি ও স্বাধীনতাকামীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, পুনরায় একত্রীকরণের জন্য বেইজিং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হংকংয়ের নাম না নিয়েই তিনি বলেন, চীন সরকার সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশটির স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে আয়োজিত কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সামরিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। সমরাস্ত্র প্রদর্শনের প্রধান আকর্ষণ ছিল ডংফেং-৪১ নামের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। কেননা প্রথমবার এটি জনসম্মুখে এলো। ক্ষেপণাস্ত্রটি একই সঙ্গে ১০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এবং একই সঙ্গে ১০টি পৃথক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ডংফেং-৪১ নামের পরামাণবিক অস্ত্রবাহী ব্যালিস্টিক ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখে  আঘাত হানতে পারবে।

কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছরের আদ্যোপান্ত : দেশটি কমিউনিস্ট। কিন্তু ধ্যান-ধারণা ও আচরণে গণতান্ত্রিক ধারণাকে ছাপিয়ে গেছে। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টির শাসন শুরু হয় চীনে। মাও সেতুংয়ের ধারণা নিয়েই দেশটি আজ অর্থনীতি, সমরনীতি এমন কি শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে। ক্ষমতায় আরোহণের ৭০ বছরে এসে দেশটি আরও হয়েছে পরিপক্ব। বলা হচ্ছে, এখনই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বিশ্বে শীর্ষে শি জিনপিংয়ের দেশ। আর কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠবে। আর বর্তমান ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্র চলে যাবে দ্বিতীয় সারিতে। কিন্তু সাত দশক আগে যখন দেশটির বর্তমান যাত্রা শুরু হয় তখন চীনের অধিকাংশ নাগরিক বিদেশ ভ্রমণের কথা কল্পনাও করতেন না। সেই চীনারা এখন প্রতি ঘণ্টায় ১৯ হাজার বার বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন। 

এবার ৭০ বছরের পথচলার ক্রমপর্যায় দেখে নেওয়া যাক। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টির শাসন শুরু হয় চীনে। পরাজিত চিয়াং কাই-শেকের ন্যাশনালিস্ট সরকারকে সেই বছরের ডিসেম্বরে পাঠানো হয় তাইওয়ানে। ‘যেখানেই জনপদ, সেখানেই আইনি সেবা’ স্লোগান ধারণ করে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় চীনের বিচার বিভাগ। সমাজের সব মানুষের ঘরে ঘরে ন্যায়বিচার পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই পথচলা শুরু হয় দেশটির বিচার বিভাগের। আজ ৭০ বছর পরও সেই লক্ষ্য সমুন্নত রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশটির বিচারকেরা।

* ১৯৫৭ সালে ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড মুভমেন্টের’ মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দিকে পা বাড়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। এ যাত্রায় মাধ্যম ছিল শিল্পায়ন ও সমবায়ীকরণ। এই সিদ্ধান্তের ফলেই চীনের আজকে এই অবস্থান বলে অনেকেই মনে করেন।

* মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে চীনে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। চীনকে পুঁজিবাদী ও সাবেকি চিন্তা থেকে মুক্ত করার এই বিপ্লবকে শুদ্ধিকরণের মর্যাদা দেওয়া হয়।

 

* ১৯৭৬ সালে মৃত্যু হয় চীনের প্রেসিডেন্ট মাও সে তুংয়ের। * ২০১২ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হন শি জিনপিং। তিনি শক্ত হাতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষমতায় বসে তিনি পুরনো সিল্ক রোড পুনরুদ্ধার করেন। এর ছয় বছর পর ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ তুলে দিয়ে দেশের সংবিধান সংস্কার করে চীন।ফলে শি জিন পিংয়ের আজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ খুলে যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুংয়ের পর দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনীতিক হিসেবে আবির্ভূত হন শি। তাকে আরও ক্ষমতাধর করতে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির গঠনতন্ত্রে সংশোধন আনা হয়। শি জিনপিংয়ের ‘নতুন যুগে শি জিনপিংয়ের চীনা সমাজতান্ত্রিক চিন্তা’ সংযুক্ত করা হয়েছে গঠনতন্ত্রে।

সর্বশেষ খবর