ইরাকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কাঁদুনে গ্যাস ও মিলিশিয়াদের গুলিতে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক দুর্দশার বিরুদ্ধে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চলীয় আমারা শহরে সংঘর্ষে সরকারের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী আসাইব আহল আল-হক মিলিশিয়া বাহিনীর এক সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। দেশটির মানবাধিকার হাইকমিশন (আইএইচসিএইচআর) ও মেডিকেল সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবারের বিক্ষোভ, সহিংসতায় সারা দেশে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে এবং জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যর্থ রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এ প্রতিবাদ মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটিকে বড় ধরনের সংকটের মুখে ফেলেছে। ‘আমরা সবাই চারটি জিনিস চাই। চাকরি, পানি, বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তা। এগুলোই আমরা চাই,’ বলেছেন বাগদাদের কেন্দ্রস্থল তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আলী মোহাম্মদ; পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস থেকে বাঁচতে ১৬ বছর বয়সী এ কিশোরের মুখ একটি টি-শার্টে ঢাকা ছিল। এদিন বাগদাদে তরুণ বিক্ষোভকারীদের ‘প্রাণ ও রক্ত দিয়ে ইরাক তোমাকে রক্ষা করব’ স্লোগানের মধ্যেই পুলিশকে মুহুর্মুহু কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধারাবাহিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১৫৭ জন নিহত ও ছয় হাজারের বেশি আহত হয়েছিলেন। আইএইচসিএইচআর জানিয়েছে, শুক্রবার কেবল বাগদাদেই পুলিশের ছোড়া কাঁদুনে গ্যাসের ক্যানিস্টারে ৫ বিক্ষোভকারীসহ অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা দক্ষিণের নাসিরিয়া শহরে মিলিশিয়া বাহিনী আসাইব আহল আল-হকের (এএএইচ) একটি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ইরান সমর্থিত এ গোষ্ঠীর সদস্যরা পাল্টা গুলি ছুড়লে আরও অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়।
আমারায় এএএইচের এক সদস্য ও এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। তেলসমৃদ্ধ বসরায় তিন বিক্ষোভকারী, হিলা ও সামাওয়াতে আরও দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা সূত্রগুলো। দিওয়ানিয়া শহরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া একটি ভবনের ভিতর আটকা পড়ে ১২ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের বিভিন্ন সূত্রের পাশাপাশি হাসপাতালের মর্গের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভবনটির ভিতরে ইরান সমর্থিত বদর অর্গানাইজেশনের স্থানীয় কার্যালয় ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ভিতরে অন্য বিক্ষোভকারীদের উপস্থিতির বিষয়টি না জেনেই একদল বিক্ষোভকারীরা ভবনটিতে আগুন দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংঘর্ষ-সহিংসতায় ইরাকজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৬৮ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালিদ আল মুহানা জানিয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া এক ভাষণে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আবদুল মাহাদি ‘সহিংসতা সহ্য করা হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সরকারের পতন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ইরাককে আরও টালমাটাল পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। বিবিসি।