শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
নেই ব্যথা, ঘুম ও খিদে!

‘সুপার হিউম্যান’ ৯ বছরের অলিভিয়া

‘সুপার হিউম্যান’ ৯ বছরের অলিভিয়া

ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের কাছে হাডারফিল্ড নামে একটা শহর আছে। সেখানে বাস করে ফার্নসওয়ার্থ পরিবার। গৃহকর্তা রিড, তার স্ত্রী নিকি ও তাদের পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে গড়া সাধারণ মধ্যবিত্ত একটি ব্রিটিশ পরিবার। কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ চিকিৎসক আজ এ পরিবারটিকে চেনেন। এর কারণ হলো তাদের দ্বিতীয় মেয়ে অলিভিয়া। ৯ বছর বয়সী অলিভিয়া পৃথিবীতে অদ্বিতীয়। অলিভিয়ার এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে যা পৃথিবীতে কারও নেই। যা ওই একরত্তি মেয়েটিকে করে তুলেছে অতিমানব। ছোট্ট অলিভিয়া দিনের পর দিন, না খেয়ে, না ঘুমিয়ে থাকতে পারে এবং যত বড় আঘাতই পাক না কেন অলিভিয়ার যন্ত্রণা লাগে না। ৯ বছরের জীবনে একদিনও কাঁদেনি এ মেয়ে।

সারা দিন-রাত জাগে অলিভিয়া : জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে বাবা-মা মেয়ের কা  দেখে আতঙ্কিত হয়ে মেয়েকে কোলে করে ছুটেছিলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারকে বলছিলেন, এ মেয়ে খিদে পেলে কাঁদে না, দিনে রাতে একদম ঘুমোয় না। ডাক্তার হেসে দম্পতিকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন এটা স্বাভাবিক, আপনারা বেশি খাইয়ে দিচ্ছেন তাই খিদেয় কাঁদছে না। আর ঘুমটা নিয়ে সব বাবা-মার চিন্তা, ওটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। কিন্তু ডাক্তারে পরামর্শ কাজে আসেনি। আবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন। সব শুনে সেই ডাক্তার অলিভিয়াকে পাঠিয়েছিলেন একটি ল্যাবরেটরিতে। সেখানে অলিভিয়ার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল। রিপোর্ট দেখে ডাক্তারের মুখ গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল।  ডাক্তার জানান, আসলে অলিভিয়া পযৎড়সড়ংড়সব ৬ঢ় ফবষবঃরড়হ নামের একটি জটিল গঠনগত ত্রুটির শিকার। তাই অলিভিয়ার খিদে ও ঘুম পায় না।

কী এই পযৎড়সড়ংড়সব ৬ঢ় ফবষবঃরড়হ!

মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় ভ্রুণের কোষগুলো বারবার বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরি করতে থাকে, ফলে গর্ভস্থ সন্তানের দেহে কোষের সংখ্যা দ্রুত ও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। কিন্তু অলিভিয়া যখন মায়ের পেটে বেড়ে উঠছিল, তার কোষের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে বাড়ছিল, কিন্তু বিভাজনের ত্রুটির জন্য অলিভিয়ার দেহের কোষগুলোতে ৬ঢ় ক্রোমোজোম উপাদানটি ছিল না। এ কারণে অলিভিয়ার খিদে ও ঘুম পাওয়ার অনুভূতিও তার জীবন থেকে মুছে গিয়েছিল।

আর এক অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট : রোজ বিকালে বাড়ির সামনের পার্কে তার ভাইবোনদের সঙ্গে খেলা করতে যেত অলিভিয়া। একদিন অলিভিয়াকে দেখে আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন মা নিকি। অলিভিয়ার নিচের ঠোঁটের অর্ধেকটা কেটে ঝুলছিল। কিন্তু মুখে একটুও ব্যথার অভিব্যক্তি ছিল না। হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছিল অলিভিয়াকে, প্রথমে স্টিচ ও পরে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়। পুরো সময়টিতে একটু কাঁদেনি অলিভিয়া। ডাক্তাররা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ‘ইস্পাত’ কঠিন মানসিকতার মেয়েটিকে দেখে।

সর্বশেষ খবর