শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
পম্পেওর পথের কাঁটা হয়ে ছিলেন সোলাইমানি

সোলাইমানি হত্যায় নাটের গুরু কে?

সোলাইমানি হত্যায় নাটের গুরু কে?

সোলাইমানি কে সে সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহামরি তেমন জানার কথা নয়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাবশালী মন্ত্রী মাইক পম্পেওর জানাশোনা অনেক পুরনো। কারণ পম্পেও ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের প্রধানও। সেই সুবাদেই এ জানাশোনা। পম্পেও অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তা হিসেবে অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত হয়ে আছেন। আর তিনি এটাও ভালোভাবে জানেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প একাই একশো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার মতের বিরোধীদের খুব একটা পছন্দ করেন না। ফলে এ দাওয়াই নিয়েই পম্পেও ট্রাম্পের আগ্যাবহ হয়ে ছড়ি ঘুরাচ্ছেন।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে ইরানের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চালান কে? কার কথায় তিনি চলছেনÑ কোটি টাকা প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া গেছে। সেই উত্তর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ ও ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকটি সূত্র বার্তা সংস্থা সিএনএনকে বলছে, ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের রকেট হামলায় ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যায় প্রভাবিত করেছিলেন পম্পেও। সিএনএন বলেছে, পম্পেওর পথের কাঁটা হয়ে ছিলেন জেনারেল কাশেম সোলাইমানি। তাকে সরাতে পারলে মধ্যপ্রাচ্যে পম্পেওর মুশকিল আসান। তাই গত এক দশক থেকেই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সোলাইমানিকে সরানোর ছক আঁকছিলেন শীর্ষ মার্কিন এ কূটনীতিক। হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাটি ট্রাম্পের সামনে আনেন পম্পেও নিজে। তিনিই এর হোতা।

পম্পেওর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলছে, নিজের ক্যারিয়ারজুড়েই পম্পেও মনে করে আসছেন মধ্যপ্রাচ্যে সমস্যার মূল কারণ ইরান ও সোলাইমানি। ওই অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকাে র জন্য সোলাইমানির বিরুদ্ধে ছায়া কমান্ডার হিসেবে কাজ করার অভিযোগও তোলেন তিনি। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনে সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে জাহির করলেন তিনি। ৫ জানুয়ারি পম্পেও টুইটে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে খারাপ মানুষটিকে সরিয়ে দিয়েছি। আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ ওই দিনই এবিসি নিউজকে পম্পেও বলেন, ‘সোলাইমানিকে হত্যা করাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আঠার মতো লেগে ছিল। মার্কিনিদের জীবনে ঝুঁকি তৈরি করছিল।’ পম্পেও আরও বলেন, ‘এটা ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নয়। তিনি সন্ত্রাসী ও মাস্টারমাইন্ড ছিলেন।’ অবশ্য পম্পেও যতই ব্যক্তিগত শত্রুতা না থাকার কথা বলুন না কেন, তিনি আসলে সোলাইমানির ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি ইরানের ভিসা নিয়ে সোলাইমানির সঙ্গে দেখা করার কথাও ভেবেছিলেন। তবে তিনি ভিসা পাননি।

আইআরজিসি নামে পরিচিত ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার ছিলেন সোলাইমানি। তবে অলিখিতভাবে তার পদমর্যাদা দেশটির যে কোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে। রেভ্যুলুশনারি গার্ডের ‘কুদস ফোর্স’ তার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতো। ২১-২২ বছর হলো বাহিনীটি গড়ে তুলছিলেন তিনি। অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য তৈরি একটা বৃহৎ ‘স্পেশাল অপারেশন ইউনিট’ বলা যায় একে; যার প্রধান কর্মক্ষেত্র এখন ইরানের বাইরে। এই সোলাইমানিকে নিয়ে পম্পেও এতটাই দুশ্চিন্তায় ছিলেন যে সম্প্রতি বন্ধুমহলে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সোলাইমানিকে না সরানো পর্যন্ত অবসরে যাবেন না। সোলাইমানিকে হত্যার পর এখন ট্রাম্প প্রশাসনে তার আধিপত্য বাড়ানোর কাজে বেশি মনোযোগী হয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি এ কাজে এতটাই মনোযোগী যে, এবার কানসাস থেকে সিনেটর হওয়ার লড়াইয়ে নামতেও চাচ্ছেন না। পম্পেওর ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনকে পথ দেখাচ্ছেন পম্পেও। বিশেষ করে ইরানের ঘটনায় প্রেসিডেন্টের নীতিমালায় পম্পেও ভূমিকা রাখছেন বেশি। প্রেসিডেন্টের নীতিমালার পক্ষে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ তার। সাবেক রিপাবলিকান জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, পম্পেও এতটাই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন যে, তিনিই এখন স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান।

সর্বশেষ খবর