শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর খেলায় পুতিন ও এরদোগান

ভয়ঙ্কর খেলায় পুতিন ও এরদোগান

সিরিয়ার একমাত্র বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত প্রদেশ ইদলিব নিয়ে তুরস্ক এবং সিরিয়ার মধ্যে এখন কার্যত যুদ্ধ চলছে। যে কোনো মুহ‚র্তে রাশিয়া এই যুদ্ধে তুরস্কের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠতে পারে- এই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। ইদলিবে গত কদিনের হামলা-পাল্টা হামলায় সিরিয়া এবং তুরস্ক দুপক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে। তবে এই খেলার মূল নায়ক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইদলিবে নিহত তুর্কি সৈন্যের সংখ্যা সরকারি হিসাবেই ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে তুরস্ক সিরিয়ার তিনটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে এবং দাবি করেছে তাদের হামলায় ছয়শরও বেশি সিরীয় সৈন্য এবং শিয়া মিলিশিয়া মারা গেছে। তবে এখনো তুরস্ক সিরিয়ায় সরাসরি রুশ সৈন্য বা রুশ যুদ্ধ বিমান টার্গেট করেনি, কিন্তু পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে তেমন ঘটনা ঘটতে মাত্র সময়ের ব্যাপার বলে সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন। ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের বিশ্লেষক কোনোর ডিলিন বলছেন, তুরস্ক এবং রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি এখন প্রবল।

পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান দুই নেতাই যে যার দেশে ‘লৌহ পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে কখনো চরম সংঘাত, কখনো নিবিড় বন্ধুত্ব দেখা যায়। কিছুদিন আগেও এই দুই নেতার সম্পর্ক যে কোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে কাছের ছিল। কিন্তু সিরিয়াকে নিয়ে এখন সম্পর্ক যথেষ্ট উত্তেজনার।

স¤প্রতি দুই নেতার মধ্যে সংঘাতের জের ধরে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে মারাত্মক হিংসার শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। গত সপ্তাহে সিরিয়ায় তুরস্কের সৈন্যদের ওপর বিমান হামলার পর এরদোগান ও পুতিনের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। জটিল এই সংকট মেটাতে দুই নেতা গতকাল মস্কোয় বৈঠক করেছেন। তবে আলোচনার ফলাফল তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। পুতিন এখনই ঘোষণা দিয়েছেন সিরীয় প্রেসিডেন্ট আসাদের ব্যাপারে তিনি কাউকে কোনো ছাড় দেবেন না।

তবে বৈঠকের আগে দুই নেতাই আলোচনার মাধ্যমে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে সংঘাত বন্ধ করার আশা প্রকাশ করেছেন। পুতিন দুই দেশের কিছু যৌথ পদক্ষেপ সম্পর্কে ঐকমত্যের ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি চান, বাশার আল আসাদের বাহিনী গোটা দেশের ওপর আবার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, এরদোগান যেন তাতে বাধা না দেন। অন্যদিকে এরদোগান সে অঞ্চলে আবার অস্ত্রবিরতির ওপর জোর দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, অতীতে এমন অস্ত্রবিরতি সম্পর্কে সমঝোতা শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে বোঝাপড়ার শর্ত অমান্য করার অভিযোগ এনেছে। এবার তিনি আসাদের বাহিনীকে ২০১৮ সালের সীমানায় পিছিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

সিরিয়াকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সংঘাতে ইউরোপও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে। এরদোগান তার নীতি কার্যকর করতে ইউরোপের সমর্থন ও সহায়তার দাবি করেছেন। কিন্তু ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তিনি গ্রিসের সীমান্ত খুলে দিয়ে শরণার্থীদের ইউরোপে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছেন। তবে এভাবে চাপ সৃষ্টি করেও এরদোগান ইউরোপের সহায়তা পাচ্ছেন না। গ্রিস সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় শরণার্থীদের অবস্থা কঠিন হয়ে উঠেছে। তুরস্কের কর্তৃপক্ষকেই সীমান্তে শরণার্থীদের ভিড় সামলাতে হচ্ছে। তবে তর্জনগর্জন ও চাপ সত্ত্বেও এরদোগান শেষ পর্যন্ত রাশিয়া ও ইউরোপের সামনে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হবেন, এমন সম্ভাবনাই উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্রবিরতি মেনে নিলেও আসাদ বাহিনীর ওপর সম্ভবত কোনো চাপ সৃষ্টি করবেন না।

সর্বশেষ খবর