মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় ধস বিশ্ব তেলের বাজারে

গতকাল তেলের দাম কমেছে ৩০ শতাংশ। যা গত চার বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন

তেলের উৎপাদন কমানোর বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়ে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব তেলের দাম কমানোর পর বিশ্ববাজারে তেলের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। চলমান অস্থিরতার মধ্যে গতকাল এশিয়ার শীর্ষ অপরিশোধিত তেল ব্রেন্টের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়ে ব্যারেলপ্রতি ৩১ দশমিক ০২ ডলারে নেমেছে। যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর শীর্ষ সংগঠন ওপেকের সঙ্গে মিত্র শক্তি রাশিয়ার দর যুদ্ধ শুরুর এই শঙ্কার ধাক্কা লেগেছে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়াসহ বিশ্ব পুঁজিবাজারেও। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস চীন থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার বড় আঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়ার শঙ্কার মধ্যে চীনের রপ্তানিতে ধস ও জাপানের মন্দা পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের এমনিতেই শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। তার মধ্যেই গতকাল লন্ডনে দিনের লেনদেনের শুরুতেই বাজারে দরপতন হয়। শীর্ষ সূচক এফটিএসই ১০০ আট শতাংশ পড়েছে।

তেলের উৎপাদন কমিয়ে আনার বিষয়ে আগেও ওপেক ও রাশিয়া একসঙ্গে কাজ করেছে। শেষ দফায় শুক্রবার সৌদি আরবের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের ওপেকের সঙ্গে রাশিয়াসহ নন-ওপেক মিত্রদের বৈঠকের পর থেকে তেলের দর বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে তেলের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে ব্যাপক হারে। অবশ্য প্রতিদিন অন্তত ১৫ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমানোর সৌদি আরবের প্রস্তাবে একমত হতে পারেনি দুই পক্ষ। এর ফলে শুক্রবারই অপরিশোধিত তেল ব্রেন্টের দর ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের নিচে নেমে যায়। সপ্তাহান্তে সৌদি আরব তেলের দাম ব্যাপক হারে কমানোর পর এশিয়া দরপতনের ধারায় রয়েছে। এ অঞ্চলের প্রধান তেল আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত।

মর্গান স্ট্যানলির জ্বালানি বিশ্লেষক মার্টিন র‌্যাটস বলেন, এমনিতেই তেলের উৎপাদন চাহিদা ছাপিয়ে গেছে। এখন বাজার ধরে রাখার প্রতিযোগিতায় ওপেক দেশগুলো তেলের সরবরাহ আরও বাড়াবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। এর আগে ২০১৬ সালে তেলের দাম আকস্মিকভাবে পড়ে গিয়েছিল। রাশিয়ার তেলের উৎপাদন না কমানোর সিদ্ধান্তে বিপদে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও। তেলের দাম কমায় ক্ষতির সম্মুখীন হবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রাশিয়ার এ আক্রমণ কার্যকর হবে না যদি না দীর্ঘদিনের জন্য তেলের দাম কম থাকে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে তেলের দাম কমায় কয়েক ডজন তেল ও গ্যাস প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায় এবং লাখো কর্মী চাকরি হারায়। সে সময় তেলের বাজারে শক্তিশালী হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের তেল ইন্ডাস্ট্রি। তারপর বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ হয়ে ওঠে তারা। এ অবস্থায় সতর্কতা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের এআরএম এনার্জির কৌশলগত বিশ্লেষক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কিথ বারনেট। তিনি বলেছেন, তেলের এই দরপতন দু-এক মাসের বেশি স্থায়ী হতে দেওয়া উচিত হবে না। তা না হলে করোনাভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিক বাজারে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এবং ক্রেতাদের আস্থা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দায় ভূমিকা রাখবে।

সর্বশেষ খবর