শিরোনাম
রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় মমতার রাজনৈতিক জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন

কলকাতা প্রতিনিধি

করোনায় মমতার রাজনৈতিক জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন

অল্পতেই মেজাজ হারানো কিংবা কখনো কখনো হুটহাট মন্তব্য করার জন্য খ্যাতি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। অতীতে বেশ কয়েকটি ঘটনায় তার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মাঝেই সেই মমতার অন্য আরেক রূপ দেখছে রাজ্যবাসী। মানবিক স্পর্শ দিয়েই একদা ‘ফায়ারব্র্যান্ড পলিটিশিয়ান থেকে নিজেকে একজন সক্ষম প্রশাসক হিসেবে মেলে ধরেছেন মমতা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবই মমতার এমন এক ব্যক্তিত্ব সামনে নিয়ে এসেছে- যা বহু মানুষেরই অজানা।

চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাতেই করোনা নিয়ে মমতার একটি মন্তব্য বিতর্ক ছড়িয়েছিল। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সফরে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, দিল্লির সহিংসতার ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার ওই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। যদিও তার এক সপ্তাহের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা ভারতেই ধীরে ধীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এমন এক পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ে তার নেওয়া ইতিবাচক কর্মকান্ডের প্রশংসা করেছে সাধারণ মানুষ, গণমাধ্যম এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও। করোনা নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, যে হাসপাতালগুলোতে করোনায় সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা চলছে বা কোয়ারেন্টাইনগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিট করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস তুলে দেওয়া, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগ আসার পর নিজে বাজারে গিয়ে নজরদারি চালানো-তার প্রতিটি কাজকেই বাহবা দিয়েছেন সবাই। চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন ‘দয়া করে আপনাদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবেন। আপনারাই যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তবে মানুষই অসহায় বোধ করবেন।’ মারণ এই ভাইরাস মোকাবিলায় কলকাতা মেডিকেল কলেজকে ‘করোনা হাসপাতাল’ হিসেবে চিহ্নিত করে ৩ হাজার আইসোলেশন বেড তৈরির ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।করোনা মোকাবিলায় ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতে রাস্তায় নেমে ইটের টুকরো দিয়ে সুরক্ষা রেখাও টানতে দেখা যায় মমতাকে। পুলিশ কমিশনারকে সঙ্গে নিয়েই পোস্তা, তারাতলা, জানবাজার, গড়িয়াহাটসহ একাধিক বাজার পরিদর্শন করে সাধারণ মানুষের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তার জন্য বাজার খুলে রাখারও নির্দেশ দেন তিনি। সাধারণ মানুষের পেটে যাতে টান না পড়ে, সেদিকে তাকিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এক মাসের রেশনের চাল-গম, এক মাসের মিড-ডে মিলের উপকরণ সরবরাহ, বিধবা পেনশন-কিষাণ পেনশন-জয় জোহারসহ সামাজিক পেনশনের রুপিও একসঙ্গে দুই মাসের দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবারও সশরীরে পথে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন দুপুরে হাসপাতাল ও কিছু বাজারে পরিদর্শন করেন তিনি। লকডাউনের ফলে মানুষ রাস্তায় না বেরোনোয় টান পড়েছে সেই রিকশাচালকদের রুটি-রোজগারে। সেই কথাটি মাথায় রেখে এ দিন বিকালে আলিপুরে সুরক্ষা বলয় মেনেই রিকশাচালকদের হাতে খাবারের (চাল, ডাল, আলু, পিয়াজ, আটা) প্যাকেট তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। পরে কালীঘাটে নাইট শেল্টারে গিয়ে গরিব-দুস্থদেরও খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর