সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

এত ভেন্টিলেটর পাবে কোথায় বিশ্ব?

এত ভেন্টিলেটর পাবে কোথায় বিশ্ব?

নিউমোনিয়ার মতোই শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার রোগ কভিড-১৯। নিউমোনিয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা বা ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে সংকটাপন্ন ব্যক্তিকে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটর সেবা  দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু এই মুহূর্তে কভিড-১৯-এ ধুঁকে চলা দেশগুলোর হাসপাতালে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জরুরি এই যন্ত্রটি পর্যাপ্ত সংখ্যায় নেই বলে জানাচ্ছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এই সময় ভেন্টিলেটর সংকট মানুষের বেঁচে থাকাকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলবে। করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যার মতোই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় ভেন্টিলেটর সেবা বাড়াতে কী করা যায়, সে উপায়ই খুঁজছে এখন সব দেশ। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি রোগীর শহর নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্লাসিও জানিয়েছেন এই সময়ে সেখানকার চাহিদার কথা; রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতে ১৫ হাজার ভেন্টিলেটর প্রয়োজন পড়বে তার।  ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নস সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড ক্রিটিক্যাল কেয়ারের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডেভিড স্টোরি বলেন, ভেন্টিলেটর ছাড়া রোগীকে বাঁচানো সম্ভব নয়; আর এখনকার এই চাহিদার কারণেই ভেন্টিলেটর ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। লাং ফাউন্ডেশন অস্ট্রেলিয়ার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং মেলবোর্নের দ্য রয়েল চিলড্রেনস হসপিটালের রেসপিরেটরি অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিনের পরিচালক অধ্যাপক শরথ রঙ্গনাথন শোনালেন আশঙ্কার কথা। ‘ইতালি ও স্পেনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিসংখ্যান মেলালে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে কভিড-১৯ রোগীর মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর হবে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না।’ ‘সেসব রোগীকে হয়তো সুস্থ করে তোলা যেত, কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভেন্টিলেটরের জোগান’ বলেন তিনি।

ভেন্টিলেটর কীভাবে কাজ করে? : বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুই রকমের ভেন্টিলেটর সেবা দেওয়া হয়; একটি মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর এবং অন্যটিকে বলা হয় নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর। মাস্ক ও অক্সিজেন ট্যাংক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে আনার এই চিকিৎসাটি নন-ইনভেসিভ পদ্ধতি বলে পরিচিত। অনেক ভেন্টিলেটর কক্ষের আর্দ্রতা স্বাভাবিক রাখতেও কার্যকর; এটা রোগীর শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাপমাত্রা বাড়ায় বা বাতাসকে আর্দ্র রাখতে পারে। যাদের মৃদু অসুস্থতা আছে তাদের মুখে বা নাকে মাস্ক লাগিয়ে ফুসফুসে অক্সিজেন পাঠানো হয়।

ভেন্টিলেটর কখন জরুরি? রোগীর শরীরে করোনা সংক্রমণ তীব্র হলে ফুসফুসে পানি জমে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর করে তোলে। কারণ এ সময় রোগীর শরীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন টেনে নিতে পারে না। অক্সিজেনের এই অভাব পূরণে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে ফুসফুসে বাতাস সরবরাহ করা হয়। সুস্থ অবস্থায় মানুষ প্রতি মিনিটে ১৫ বার শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। কিন্তু যদি কেউ মিনিটে ২৮ বার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকেন তবে এ সময় তাকে ভেন্টিলেটর দেওয়া জরুরি হয়ে উঠতে পারে।

ভেন্টিলেটর ঘাটতি পূরণে কী করছে বিশ্ব : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে যুক্তরাজ্যের সরকার ইতিমধ্যে ১০ হাজার ভেন্টিলেটর নিতে যাচ্ছে ডাইসন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ব্রিটিশ উদ্ভাবন জেমস ডাইসন বিবিসিকে বলেন, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) জন্য তারা নতুন ধরনের ভেন্টিলেটর নির্মাণ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির শত শত প্রকৌশলী নতুন এই যন্ত্রের পেছনে কাজ করে চলেছেন।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান হেলথ কেয়ার অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশন, দ্য অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার সোসাইটির পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার শিল্পমন্ত্রী কারেন অ্যান্ড্রিউসও মনে করছেন, ভেন্টিলেটরের এই ঘাটতি এড়ানো সম্ভব। অস্ট্রেলিয়ার সরকার পরীক্ষা করে দেখছে প্রাণীদের চিকিৎসায় যে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয় তা কোনোভাবে উন্নত করে কভিড-১৯ রোগীদের সংকটাপন্ন অবস্থায় ব্যবহার করা যায় কি-না। অ্যাম্বুলেন্সে যে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়, সেটাও একটি বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর