রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

লকডাউনে মিলছে সুফল

করোনায় বৈশ্বিক মহামারী

তানভীর আহমেদ

লকডাউনে মিলছে সুফল

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতালিজুড়ে চলমান লকডাউনের মধ্যে মিলানের নিকটবর্তী একটি এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বরত এক সেনাসদস্য

জানুয়ারির ২২ তারিখ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তখন ৫৮০। দুই মাস পর ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৯ জন। এই ৬০ দিনে মারা গেছেন ১৪ হাজার ৬৪০ জন। শুরুটা হয়েছিল চীনে। এরপর করোনা চীন থেকে ছড়িয়ে গেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। দক্ষিণ কোরিয়া শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে থাকে। কিন্তু ইরান ও ইতালিতে তখন হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ইতালি থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ল গোটা ইউরোপে। মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠে স্পেন, ফ্রান্স। এখন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মৃত্যুর মিছিল ছুটিয়েছে। ঝুঁকির শীর্ষে আছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। একে একে লকডাউন করা হয় রাজধানী ও আক্রান্ত শহরগুলো। তারপর গোটা দেশ। সীমান্ত বন্ধ, বিমানবন্দর বন্ধ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল, বাজার সব বন্ধ করে দিয়ে গোটা বিশ্বে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন কোয়ারেন্টাইন (ঘরবন্দী) জীবনযাপন করছে। ভ্যাকসিন নেই। নেই কার্যকরী ওষুধ। কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতটা সম্ভব করোনাকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা বিশ্বজুড়ে। কঠোর লকডাউনে দারুণ সুফল পেয়েছে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর। ইতালি ও স্পেনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। পেছনের কারণ লকডাউনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতা।  লকডাউনে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ফ্রান্স ও জার্মানিতেও। যুক্তরাষ্ট্রও কঠোর লকডাউনে মনোযোগ বাড়িয়েছে। লকডাউনে বন্দীদশায় হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ এখন পরিত্রাণের খবর শুনতে চায়। সে কথা বলেছেন ঝুং নানশান। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ এপ্রিলের শেষে কমে যেতে পারে বলে আশা করেছেন চীন সরকারের উপদেষ্টা  ও রোগ বিশেষজ্ঞ নানশান। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনও এক ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ আগামী ২০ এপ্রিলের দিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। এরপর এ ভাইরাসের প্রকোপ কমতে থাকবে। গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিনটিতে করোনার কথা বিশ্বকে জানায় চীন। এরপর কঠোর লকডাউনে থাকতে হয় তিন মাস। নতুন সংক্রমণ কমে আসায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশটি। যদিও চীনে এখন আবার সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। তবে তা মারাত্মক মাত্রার নয়। চীনের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে গোটা দেশে স্থানীয় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে। চীনের প্রায় আড়াই মাস সময় লেগেছে করোনা নিয়ন্ত্রণে। অবশ্য ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ হয়েছে অবিশ্বাস্য গতিতে। ইতালিতে করোনার সংক্রমণ চিত্র বলছে, প্রথম রোগী শনাক্তের এক মাস পর থেকে পরিস্থিতির ভয়াবহতা নাটকীয়ভাবে পাল্টাতে থাকে। নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এরপর দ্রুত বাড়তে শুরু করে। একই দৃশ্য স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানিতেও। আক্রান্তের খোঁজ পাওয়ার পর ৬০ দিনের মাথায় চূড়ান্ত ভয়াবহতা দেখাতে পারে করোনাভাইরাস। এরপর তা কমতে শুরু করছে। এসব সংখ্যাতত্ত্বে এটা স্পষ্ট দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া কোনো রোগ যখন এভাবে প্রাকৃতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তখন মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোগ ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দুই বছরের মধ্যেই মানুষের শরীর এ ধরনের ভাইরাসকে ঠেকানোর উপযোগী প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজে থেকেই অর্জন করবে। ভ্যাকসিন ও ওষুধের খোঁজে সবাই একসঙ্গে কাজ করছে। আপাতত আক্রান্ত রোগীদের আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া, করোনা টেস্ট বাড়ানো, কঠোর কোয়ারেন্টাইনে নতুন করে কেউ যেন আক্রান্ত না হয় সেদিকেই নজর রাখছে সবাই। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শুরুর দিকে বা মাঝামাঝিতে করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের দেখা মিলতে পারে। সে হিসাবে করোনায় বিশ্ব পরিস্থিতি উন্নতির দিকেই যাবে বলে আশাবাদী সবাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর