মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রিয়জনকে প্রাণ খুলে বিদায় জানানোও এক মহাবিপদ!

প্রিয়জনকে প্রাণ খুলে বিদায় জানানোও এক মহাবিপদ!

যখন কেউ তার প্রিয়জনকে হারায়, সেই কষ্ট সামলানো প্রত্যেকের জীবনের কঠিন সময়গুলোর একটি। কিন্তু এখন স্বজনকে বিদায় জানানোর সেই ব্যাপারটিকে আরও কঠিন আর বেদনাবিধুর করে তুলেছে করোনাভাইরাস। এখনকার চরম বাস্তবতা হলো- বিদায় জানাতে কাছে গেলেই যে তা কাল হয়ে যাবে। ফলে খুব অসুস্থ এবং মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তিরাও তাদের স্বজনদের পাশে পাচ্ছেন না। সাধারণত যেভাবে শেষকৃত্যানুষ্ঠান করা হয়ে থাকে, সেভাবে হচ্ছে না। মানুষজন এমনকি একসঙ্গে মিলে শোক পালনও করতে পারছে না। তার পরেও প্রিয়জনকে স্মরণ করতে, তার জন্য শোক করার জন্য অর্থবহ কিছু উপায় রয়েছে। ‘সবচেয়ে কঠিন হলো একত্রে থাকতে না পারা’। ইংল্যান্ডের নর্থফোক অ্যান্ড নরউইচ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আইক স্কিনডারের ৯৯ বছর বয়সী দাদাকে যখন বক্ষব্যাধির সমস্যা নিয়ে গত সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো, তখন তিনি জানতেন যে, তার দাদা হয়তো আর বাড়িতে ফিরে আসবেন না। ‘সাধারণ সময় হলে হয়তো আমাদেও কেউ তার সঙ্গে যেতাম। সেখানে হয়তো আমরা তার ব্যাপারে আলোচনা করতাম এবং পরিবারের সদস্যদের জানাতাম। কিন্তু তার বদলে তার সঙ্গে এখন আমাদের রিমোট যোগাযোগ করতে হচ্ছে।’ তিনি বলছেন। তিনি বলছিলেন, লন্ডন রয়েল ফ্রি হাসপাতাল খুব ভালো একটি হাসপাতাল, কিন্তু টেলিফোনে কথা বলার জন্য সেখানে খুব কম সময় পাওয়া যায়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, হাসপাতালে শুধু একজন ব্যক্তি দেখা করতে পারবেন। কিন্তু তাকেও মাস্কসহ সুরক্ষা সরঞ্জাম পরতে হবে। এরপর পরবর্তী ১৪ দিন তাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট, স্কিনডারের খালা তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। ‘একপর্যায়ে আমরা বুঝতে জানতে পারলাম, সেখানে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হতে যাচ্ছে। কিন্তু সেটা জানার পরেও আমার ওই খালা সেখানে অংশ নিতে পারেননি, কারণ তখন দাদাকে দেখে আসার কারণে তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। স্কিনডার বলছেন, যখন তার দাদার মৃত্যু হয়, তখন পরিবারের সবাই বুঝতে পারছিলেন যে, এখানে নতুন করে আর কিছু করার নেই। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয়টি ছিল এ রকম একটি সময়েও পরিবারের সদস্যদের একত্রিত হতে না পারা। যেদিন শেষকৃত্যানুষ্ঠান হয়, সেদিন তিনি বাড়িয়ে আইসোলেশনে ছিলেন, কারণ তার দুই বছর বয়সী শিশুটি জ্বরে ভুগছিল। দাদার শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হতে না পেরে জুমের মাধ্যমে ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়। তাদের ১২ জন আত্মীয় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসে সেই অনুষ্ঠান দেখেন। শুধুমাত্র তার মা, বাবা আর বোনরা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। তার পিতামাতার কাছ থেকে দুই মিটার দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বোন।

শেষকৃত্যানুষ্ঠান নিয়ে কী বলছে ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগ : যারা শেষকৃত্যানুষ্ঠান পরিচালনা করবেন, তাদের অবশ্যই দায়িত্ব হবে যাতে যতটা সম্ভব কম মানুষ উপস্থিত থাকেন। শুধু ওই পরিবারের সদস্য বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা সেখানে অংশগ্রহণ করবেন। করোনা ভাইরাসের লক্ষণ  রয়েছে, এমন কেউ সেখানে অংশগ্রহণ করবেন না। পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত না হলে খুব কম সংখ্যক বন্ধু অংশ নিতে পারেন।

সর্বশেষ খবর