বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় হিরো ও হিরোইন

তানভীর আহমেদ

করোনায় হিরো ও হিরোইন

করোনাভাইরাস সব এলোমেলো করে দিচ্ছে। মানুষের এমন দুর্দিনে মানুষ সেই পুরনো কথাই নতুন করে স্মরণ করছে। মানুষের চেয়ে বড় কিছু  নাই। সব ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে ভালোবাসার এই সময়ে যে যেভাবে পারে এগিয়ে আসছে। ঘরবন্দী থাকার নির্দেশনা আছে সবার জন্য। তবে জরুরি পরিষেবা চাই। চিকিৎসা ও জরুরি পরিবহনে অনুপ্রেরণীয় দুজনকে করোনায় হিরো ও হিরোইন বলে মানা যায়। একজন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পাইলট। এখন তিনি চালাচ্ছেন ডেলিভারি ভ্যান। অন্যজন মিস ইংল্যান্ড। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এই তরুণী মডেলিং ছেড়ে ফিরেছেন চিকিৎসকের পেশায়। সত্যিকারের এমন নায়ক- নায়িকা সারা বিশে^ অসংখ্য। তারা এগিয়ে এসেছেন বলেই সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখে করোনাকে জয় করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার।

ব্রিটিশ পাইলট চালাচ্ছেন ডেলিভারি ভ্যান : করোনায় টালমাটাল বিশ^। কোয়ারেন্টাইনে ঘরবন্দী থাকতে হচ্ছে সবাইকে। করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে জরুরি সেবা দিতে এগিয়ে এসেছেন অনেকে। তাদেরই একজন পিটার লগিন। পেশায় একজন পাইলট। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এই পাইলট এখন কাজ করছেন একজন ডেলিভারি ভ্যানের ড্রাইভার হিসেবে। সুপারস্টোর চেন টেসকোর ডেলিভারি ভ্যান চালানোর সে খবর নিজেই দিয়েছেন সবাইকে। টুইটারে এক পোস্টে ডেলিভারি ভ্যানটিকে দেখিয়ে তিনি লেখেন, ‘সেভেন-ফোর-সেভেনের চাবি আপাতত ঝুলিয়ে রেখেছি। এখন ফিরে এসেছি টেসকোর ভ্যানের ককপিটে।’ ব্রিটিশ যাত্রীবাহী বিমানের পাইলটের এই টুইটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দারুণ প্রশংসিত হচ্ছে। আসলে কোনো কাজই ছোট নয়। ব্রিটিশ পাইলট সেটাই দেখালেন। করোনায় সবার প্রথমেই বন্ধ হয়ে যায় এয়ারলাইন্স ও সীমান্ত। বিশ^ থেকে নিজেকে আলাদা করতে একে একে বহু দেশ সে পথেই হেঁটেছে। এয়ারলাইন্সগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার কর্মীরা এখন অবসর ঘরবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের একজন পিটার লগিন ঘরে বসে থাকতে পারেননি। বিমানের ককপিটে এখন বসতে না পারলেও ডেলিভারি ভ্যানের চালকের আসনে ঠিকই বসেছেন। দেশের দুর্দিনে ব্রিটিশ পাইলটের ডেলিভারি ভ্যানের সামনে বসে এই হাসিমুখ প্রেরণা জোগায়।

মডেলিং ছেড়ে করোনা চিকিৎসায় : ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালি ভাষা মুখার্জি। থাকেন ইংল্যান্ডের ডার্বি শহরে। পেশায় চিকিৎসক। নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি চিকিৎসা বিজ্ঞান, অন্যটি মেডিসিন ও সার্জারি বিষয়ে দুটি আলাদা ডিগ্রি রয়েছে তার। বয়স সবে ২৪। তখন কাজ করতেন বস্টনের পিলগ্রিম হাসপাতালে। সেখানে কাজ করার সময়ই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহী হন। স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখতে ডাক্তারি ছেড়ে নাম লেখান ইংল্যান্ডের সুন্দরী প্রতিযোগিতায়। শারীরিক সৌন্দর্য তো বটেই সঙ্গে মেধার লড়াইয়েও সবাইকে পেছনে ফেলেন তিনি। জানেন পাঁচটি ভাষা। উচ্চ শিক্ষায় একাধিক ডিগ্রি। উপস্থিত বুদ্ধি ও সাবলীল উপস্থাপনায় জিতে নেন মিস ইংল্যান্ড ২০১৯ এর খেতাবটি। এরপর বিশে^র বিভিন্ন দেশের চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান মানবিক ও সমাজ উন্নয়ন সেবায় তাকে অ্যাম্বাসেডর হওয়ার প্রস্তাব দেয়। সেসব নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। সম্প্রতি এসেছিলেন ভারতে। চার সপ্তাহের জন্য সেখানে এসেছিলেন কভেন্ট্রি মার্সিয়া লায়নস ক্লাবের    সম্মানে। সেখানে বিভিন্ন স্কুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় শিক্ষার্থীদের সচেতন করেছেন। লায়নস ক্লাবের হয়ে প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশুদের আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এই মাঝে বিশ^ব্যাপী করোনার প্রকোপ বেড়েছে। দেশে দেশে দেখা দিয়েছে চিকিৎসক ও নার্স সংকট। তাই ডাক পড়ল তারও। তার পুরনো    কর্মস্থল প্রিলগ্রিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের চিকিৎসক প্রয়োজন। প্রস্তাব শোনামাত্রই ইংল্যান্ডে ফিরে যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর