বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

লকডাউনে ব্রিটেনে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ২৫ শতাংশ

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের সময় বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে গেছে বহুগুণ

লকডাউনে ব্রিটেনে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ২৫ শতাংশ

লকডাউনে ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশে নারী নির্যাতন  বেড়েছে এমনই এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের সময় বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে গেছে বহুগুণ। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শুধু ব্রিটেনে নয়, লকডাউনের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে নারীর প্রতি পারিবারিক নির্যাতন। ব্রিটেনের পারিবারিক সহিংসতার বিষয়ে সহায়তা দেয় দ্য ন্যাশনাল ডমেস্টিক অ্যাবিউজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সম্প্রতি তাদের হেল্পলাইনে সাহায্য চাওয়ার পরিমাণ  বেড়ে গেছে। দুই সপ্তাহ আগে যখন লকডাউন ছিল না, তখনকার তুলনায় বর্তমানে সাহায্য চাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ২৫ শতাংশ। ঘরে আটকে থাকার ফলে নারীরাই মূলত তাদের বন্ধু বা স্বামীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের এই সময় সব দেশের সরকারকে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস। ব্রিটেনের দ্য ন্যাশনাল ডমেস্টিক অ্যাবিউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লকডাউনের সময় নির্যাতনের শিকার নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তাদের ঘরেই থাকতে হচ্ছে। তবে কেউ কেউ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে লকডাউনের মধ্যেই ঘর ছাড়ছেন। ঘর ছেড়ে পালানো এক নারী বিবিসিকে বলেন, ছয় মাস ধরে তার স্বামী তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন। তবে কয়েকদিন আগে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই সেই নির্যাতন বেড়ে গেল বহুগুণ।

বাধ্য হয়ে এই দুর্যোগের মুহূর্তে তিনি ঘর ছেড়েছেন। ওই নারী এখন ওয়েলসের একটি সেবামূলক সংগঠনের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ব্রিটেনে লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়লে পারিবারিক সহিংসতার পরিমাণও বহু গুণ বেড়ে যাবে। পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে কাজ করেন স্যান্ড্রা  হোরলে জানিয়েছেন, গত বছর শুধু ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ১৬ লাখ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন। এ বছর এ সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

শুধু ব্রিটেন নয়, লকডাউনের সময় গৃহ নির্যাতন বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার  দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত নারীদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে ইয়েমেন, মরক্কো ও মিসরের একচতুর্থাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। গত সপ্তাহে তিউনিসিয়ার নারী বিষয়ক মন্ত্রী আসমা শিরি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তার দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনের সময় গৃহনির্যাতন আশঙ্কাজনক ?হাওে বেড়ে গেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ?মাসের মাঝামাঝিতে কারফিউ জারি করে তিউনিসিয়া সরকার। তারপর থেকে গৃহনির্যাতন পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে। অথচ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অর্ধেকের বেশি দেশে গৃহনির্যাতন রোধে আইন আছে। বাস্তবে এর কর্যকারিতা অবশ্য দেখা যায় না বললেই চলে। ডয়েচে ভেলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, লকডাউনের এ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই বাড়ির ভিতরে অনেক সময় ধরে থাকার কারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে স্বামীরা। শুধু স্ত্রী নয় সন্তানরাও এই অত্যাচার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। অনেক নারী জানিয়েছেন, স্বামী কাজের কারণে বাইরে থাকলেই কেবল বাড়িতে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। কিন্তু এখন সরকারের কড়াকড়ির কারণে তার স্বামী কাজের জন্য বাইরে যেতে পারছেন না। তাদের ও তাদের সন্তানদের ওপর নির্যাতন বেড়ে  গেছে।  সাধারণত নারীরাই ঘরের কাজ সামলান। লকডাউনের এ সময়ে তাদের ওপর কাজের চাপ আরও বেড়েছে। লেবাননের সমাজকর্মী রানিয়া সুলেইমান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের সব লোক সারা দিন বাড়িতে থাকছেন। তাদের প্রয়োজন মেটাতে নারীরা বাড়তি চাপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বামীরা ঘরে থাকায় স্ত্রীকে সঙ্গে সঙ্গে তাদের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে, না পারলে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।’

সর্বশেষ খবর