বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

কীভাবে অর্থনীতি সচল হবে ভাবছেন জার্মান বিশেষজ্ঞরা

কীভাবে অর্থনীতি সচল হবে ভাবছেন জার্মান বিশেষজ্ঞরা

করোনাভাইরাসের মহামারী নিয়ন্ত্রণে মানুষকে ঘরে রাখতে ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধসহ বিশ্বজুড়েই সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকা  প্রায় অচল থাকায় ক্ষতির বোঝা প্রতিদিনই বাড়ছে। অভূতপূর্ব এ মহামারী কবে নাগাদ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে সে বিষয়ে এখনই কোনো ধারণা পাওয় যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে কর্মকাে  কড়া বিধি-নিষেধ চালু থাকলে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে কারণে মহামারী ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকার মধ্যেই কীভাবে প্রাদুর্ভাব কমানোর সুযোগ নিয়ে কল-কারখানা, অফিস-আদালত ও স্কুল আস্তে আস্তে খোলা যায় তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে অনেক দেশ।

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে এরই মধ্যে অস্ট্রিয়া ইস্টার উৎসবের পর দোকানপাট চালু করার ঘোষণা দিয়েছে বলে সিএনএন জানিয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসে জার্মানিতে এখন এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই মহামারী ছড়ানো ঠেকিয়ে কীভাবে সুনির্দিষ্ট কারখানা ও কর্মীদের কর্মকা  শুরু করা যায় সে বিষয়ে একটি সুপারিশ তৈরি করছেন ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল। সিএনএন বলছে, গত সপ্তাহে আইএফও ইনস্টিটিউট ফর ইকনোমিক রিসার্চে প্রকাশিত বিশেষজ্ঞ দলটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কোনো কার্যকর চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন ২০২১ সালের আগে আবিষ্কার করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন না। তাই এই রোগের বিরুদ্ধে জার্মানিকে ‘¯িপ্রন্টের বদলে ম্যারাথন’ গতিতে লড়ার সুপারিশ করেছেন তারা। তারা লিখেছেন, ‘এমনভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সেগুলো সুস্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মেয়াদের সময়কালের জন্য টেকসই হয়। রাজনীতি, প্রশাসন, কোম্পানি ও অন্য সব সংস্থার ক্ষেত্রেই এ রকমের রূপান্তর প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত।’ অর্থনৈতিক মন্দার দোরগোড়ায় থাকায় জার্মানি মহামারী ঠেকাতে অন্তত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল রেস্তোরাঁ খেলার মাঠ ক্রীড়াঙ্গন এবং অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রেখেছে। এ বিধিনিষেধ উঠিয়ে দেওয়ার কোনো সময়সূচি এখনো বলে সরকারের মুখপাত্র স্টিফেন সিবার্ট বলেছেন। আইএফও-এর পূর্বাভাস বলছে, লকডাউন পরিস্থিতি আরও তিন মাস অব্যাহত তাহলে জার্মানি অন্তত ২০ শতাংশ জিডিপি হারাবে।

কীভাবে ফের স্বাভাবিক হবে অর্থনীতি : অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া, কোম্পানির কিছু অংশ অধিগ্রহণ করা এবং শ্রমিকদের ছুটিতে ভর্তুকির মতো পদক্ষেপসহ প্রায় ৮২৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার। অর্থনৈতিক কর্মকা  ও জনজীবনে আরোপিত বিধি-নিষেধ কবে নাগাদ সহজ করা যায় এবং কারখানাগুলোতে কখন উৎপাদন শুরু করা যায় সে বিষয়ে সুপারিশমালা তৈরির জন্য বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে জার্মানির বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে। এতে বলা  হয়েছে, অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা টেলিযোগাযোগ ও অটোমোবাইল উৎপাদনের মতো কারখানাগুলো প্রথমে চালু করা যায়। অন্যদিকে বাড়িতে থেকে যেসব কাজ করা যায় সেগুলো দূরে থেকেই সারা উচিত। শিশুদের মধ্যে তেমন মারাত্মক উপসর্গ এখনো পর্যন্ত দেখা না দেওয়ায় নার্সারি ও স্কুলগুলো দ্রুত খুলে দেওয়া যায়। কিন্তু শিশুসেবা কেন্দ্র এবং স্কুল চালু না হলে পিতা-মাতাদের কর্মস্থলে যাওয়া বন্ধ রাখা উচিত।

ক্লাব ও বড় অনুষ্ঠান বন্ধই থাকবে : স্বাস্থ্যসেবা পণ্য ও উপাদান প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো দ্রুত চালু করার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা খুব কঠিন বলে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত পরিচালনা নিশ্চিত করে হোটেল ও রেস্তোরাঁ স্থাপনাগুলো খোলার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে তারা। সেই সঙ্গে ডিস্কো ক্লাব বন্ধ রাখা ও ব্যাপক সংখ্যক দর্শক নিয়ে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন না করার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।

সর্বশেষ খবর