শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিনের আশায় বিশ্ব

এখনো কোনো আশার আলো নেই। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণ। শত কোটি মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছে বিশ্ব আবার কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ বলছে এখন একমাত্র উপায় এর প্রতিষেধক আবিষ্কার।

ভ্যাকসিনের আশায় বিশ্ব

মানব দেহে ভ্যাকসিন পরীক্ষায় প্রস্তুত অক্সফোর্ড : আর অপেক্ষা নয়। আগামী সপ্তাহেই করোনার ভ্যাকসিন মানবশরীরে পরীক্ষা করতে চান ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা। আর এ পরীক্ষা করবেন অক্সফোর্ডের গবেষকরা। সারা বিশ্বের অন্য গবেষকদের মতো অক্সফোর্ডের গবেষকরাও কভিড ১৯-এর প্রতিষেধক তৈরিতে কাজে লেগে পড়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী ওষুধ তৈরিতে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ বলছে, এ মুহূর্তে করোনার প্রতিষেধক হিসেবে বিশ্বজুড়ে মোট ৭০টি ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে। চীনে একদল গবেষক ও যুক্তরাষ্ট্রে অপর দুই গবেষক দল ইতিমধ্যেই মানবশরীরে তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করতে শুরু করেছে।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন পরীক্ষার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই ৫১০ জনকে নমুনা হিসেবে করা হয়েছে। এদের প্রত্যেকেরই বয়স ১৮ থেকে ৫৫-এর মধ্যে। এরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ওই ওষুধ নিজেদের শরীরে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। আপাতত আশা করা হচ্ছে, জেনার ইনস্টিটিউট এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ভ্যাকসিন সেপ্টেম্বরে প্রস্তুত হবে।

একমাত্র প্রতিষেধকই পারে বিশ্বকে ছন্দে ফেরাতে : শত কোটি মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছে বিশ্ব আবার কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ বলছে এখন একমাত্র উপায় এর প্রতিষেধক আবিষ্কার। সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, একমাত্র টিকা আবিষ্কার হলেই রোখা যাবে এই অতিমারী। স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে বিশ্ব। বুধবার আফ্রিকার ৫০টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে করোনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন গুতেরেস। সেখানে তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য পুরোপুরি সুরক্ষিত ও নিরাপদ প্রতিষেধকই কেবল পৃথিবীকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে পারবে। তাতেই বাঁচবে কোটি মানুষের প্রাণ, আর রক্ষা পাবে হাজার হাজার কোটি অর্থ।’ জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে জিততে হলে বিশ্বের সব দেশের রাষ্ট্রনেতা, শিল্পপতিদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। গবেষণার জন্য তহবিল গড়তে হবে। আপাতত করোনা থেকে বাঁচতে বিশ্বের বহু দেশে লকডাউন চলছে। বন্ধ আন্তর্জাতিক সীমান্ত। ব্যবসা বাণিজ্যেও শূন্যতা। সংস্থাটি আগেই জানিয়েছে, এভাবে যদি গোটা বিশ্বে লকডাউন চলতে থাকে তাহলে তীব্র খাদ্যসংকট তৈরি হতে পারে। লকডাউনের জেরে যেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন এবং পরিবহন বন্ধ হয়ে পড়েছে, তাতেই সংকট সৃষ্টির সম্ভাবনা। এ তো গেল লকডাউনের আর্থিক ক্ষতিকর দিক। করোনায় যেভাবে মৃত্যুর মিছিল চলছে তাতে এমনিতেও আরও বহু মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে প্রতিষেধক তৈরি ছাড়া এই ভাইরাস রুখে দেওয়ার আর কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করছে জাতিসংঘ।

শেষ পর্যন্ত চীন থেকেই ? করোনা সংক্রমণের জেরে সারা বিশ্বে হাহাকার অবস্থার মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে চীন। মঙ্গলবার করোনার দুই ধরনের প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমতি দিয়েছে চীনা প্রশাসন। এমনটাই জানিয়েছে চীন কাউন্সিলের যৌথ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ পরিষদ। চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব বায়োলোজিক্যাল প্রোডাক্টসের জাতীয় ওষুধ বিশেষজ্ঞ দল ও বেইজিংয়ের সিনোভেক বায়োটেকের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে ওষুধ। এর আগে সার্স, হেপাটাইটিস-এ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের (এইচ৫এন১) প্রতিষেধক আবিষ্কারের কাজে গবেষণা করেছিলেন সিনোভেক বায়োটেকের সিইও ইয়িন ওয়েডং। তিনি জানিয়েছেন চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন তারা। তিনি বলেছেন, ‘যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হওয়া যায়, তাহলে দ্রুত প্রতিষেধক তৈরি করা হবে। বছরে ১০ কোটির বেশি প্রতিষেধক তৈরি করতে সক্ষম তারা।’ চীনা বিজ্ঞানীরা যেসব উপায়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারের কথা ভাবছেন তা হলো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সাব-ইউনিট ভ্যাকসিন, অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড ভ্যাকসিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর