সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনাভাইরাস ইস্যু

চীনকে পরিণতি ভোগ করার হুশিয়ারি ট্রাম্পের

চীনকে পরিণতি ভোগ করার হুশিয়ারি ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ট্রাম্প, শি জিনপিং

চীনের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি চীনের গবেষণাগার থেকেই করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। চীন বিষয়টির ভয়াবহতা জানত। কিন্তু এ বিষয়ে সতর্ক বার্তা দেয়নি। আর অদূর ভবিষ্যতে যদি এ বিষয়গুলো প্রমাণিত হয় তাহলে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার হোয়াইট হাউসের দৈনিক ব্রিফিংয়ে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর রয়টার্সের

করোনাবিষয়ক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘নতুন বছর (২০২০) শুরু হওয়ার আগে চীনেই এটি থামানো যেত, তা হয়নি আর এখন পুরো বিশ্ব এর কারণে ভুগছে।’ করোনাভাইরাসের এই সংকটকালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দুটির মধ্যে যখন নজিরবিহীন সহযোগিতা দরকার, তখন দুই পক্ষের এই কথার লড়াই উল্টো বেইজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত করে চলছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি এটা ভুল হয়ে থাকে, ভুল ভুলই।

কিন্তু তারা যদি জ্ঞানত দায়ী থাকে, হ্যাঁ, আমি বলছি, তখন অবশ্যই ফল ভোগ করতে হবে।’ তবে ওই রকম পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে এ ব্যাপারে অবশ্য কোনো ধারণা দেননি তিনি।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর চীন এ বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য দেয়নি বলে বেশ কিছুদিন ধরেই ট্রাম্প ও তার শীর্ষ সহযোগীরা অভিযোগ করে আসছেন। শুধু তাই নয়, ভাইরাস ইস্যুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘চীন ঘেঁষা’ আখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহে সংস্থাটির তহবিলও স্থগিত করেছেন। ভাইরাসটিকে ঘিরে ওয়াশিংটন ও বেইজিং এখন প্রকাশ্যেই তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। প্রথমদিকে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে ভূমিকার জন্য চীন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। তবে তিনি ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তখনো ভাইরাসটিকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে উল্লেখ করেছিলেন; আর এখন দেশটির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে কথা বলছেন। আর   ট্রাম্পের শনিবারের ঘোষণার পর রিপাবলিকান অনেক সিনেটর সুর চড়িয়েছেন। তারা   বলছেন, নতুন একটা আইন করা হবে। যাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তরা চীনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।

এদিকে ট্রাম্পের স্বদেশি সমালোচকরা বলছেন, প্রাদুর্ভাব শুরুর সময় চীন মানসম্পন্ন ভূমিকা পালন করতে পারেনি এবং কী ঘটেছে তা এখনো স্পষ্ট করেনি। প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় নিজের ভুলত্রুটি ঢাকতে ট্রাম্প এখন বেইজিংকে ব্যবহার করতে চাইছেন এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু ভোটারের মধ্যে বাড়তে থাকা চীনবিরোধী মনোভাবের সুযোগ নেওয়ারও চেষ্টা করছেন, বলছেন তারা। রয়টার্স তার প্রতিবেদনে লিখেছে, একই সময় দুই পক্ষের উত্তেজনা অতি চরম পর্যায়ে চলে গেলে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বিষয়েও সজাগ আছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা।

মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণের (পিপিই) জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল; ট্রাম্প বেইজিংয়ের সঙ্গে কষ্টার্জিত বাণিজ্য চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতেও আগ্রহী।

কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক ভালো ছিল মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘কিন্তু তারপর হঠাৎ করেই আপনি এগুলো শুনছেন। ভুল করে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ছাড়া হয়ে গেছে, না জেনেশুনে এটি করা হয়েছে? এই দুটির মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য আছে।’

উল্লেখ্য, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ খবর পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন অন্তত ৩৯ হাজার ৯০ জন। আর সর্বশেষ খবর পর্যন্ত ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৮২ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৬৩২ জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর