মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বিনা ভাড়ায় ট্রেন ভ্রমণের দাবিতে ভারতে পরিযায়ী শ্রমিক বিক্ষোভ

টিকেট ছাড়া ভ্রমণ করতে দিলে করোনা পরীক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে : রেল কর্তৃপক্ষ

বিনা ভাড়ায় ট্রেন ভ্রমণের দাবিতে ভারতে পরিযায়ী শ্রমিক বিক্ষোভ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত। এ অবস্থায় ভারতে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। নিজ রাজ্যে ফেরার চেষ্টারত পরিযায়ী শ্রমিকদের তাদের নিজেদের ট্রেন ভাড়া বহন করতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকারের এমন সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নতুন করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৪ মার্চ থেকে ভারতে লকডাউন শুরু হয়। এতে লাখ লাখ দিন মজুর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য আটকা পড়েন, বন্ধ হয়ে যায় তাদের আয়ের পথ।

নগদ টাকা, আশ্রয় ও খাদ্যবিহীন এসব পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজ নিজ রাজ্যে ফিরতে মরিয়ে হয়ে ওঠে। বহু লোক হেঁটে কিংবা সাইকেলে করে শত শত বা কখনো কখনো হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নিজ নিজ রাজ্যে ফেরার উদ্যোগ নেন। এরকম চেষ্টা করতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অনেকে এভাবে ফিরলেও বেশিরভাগ শ্রমিকই বিভিন্ন দূর রাজ্যে আটকা পড়ে আছেন। এ পরিস্থিতিতে আটকা পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য  ট্রেনের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তাদের ট্রেন ভাড়া তাদেরই বহন করতে হবে বলে জানায় রেল মন্ত্রণালয়। কিছু টিকিটের দাম প্রায় ৮০০ রুপি, কিন্তু একজন দিন মজুর প্রতিদিন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ রুপি আয় করতে পারেন বলে জানাচ্ছে বিবিসি। এ নিয়ে ভারতজুড়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মুখে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা শ্রমিকদের ট্রেন ভাড়া বহন করবে। এক বিবৃতিতে কংগ্রেস পার্টি প্রধান সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি ‘সংহতি’ জানিয়ে কংগ্রেস তাদের ট্রেন ভাড়া পরিশোধের ব্যবস্থা করবে। সরকার অন্যান্য দেশে আটকাপড়া ভারতীয় নাগরিকদের যখন বিনা ভাড়ায় উড়োজাহাজযোগে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছে, তখন শুধু পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে ট্রেন ভাড়া চাওয়া হচ্ছে কেন, বিবৃতিতে এ প্রশ্ন রেখেছে কংগ্রেস। নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বলছে, ‘সত্যিকারের আটকাপড়া’ লোকজনই যেন এই ট্রেন সার্ভিসগুলো ব্যবহার করে তা নিশ্চিত করতেই তাদের এ সিদ্ধান্ত। ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব বলেছেন, এই ট্রেন সার্ভিস ফ্রি করা হলে লোকদের পরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু পরিযায়ী শ্রমিক ও আটকাপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য সার্ভিসটির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সরকারের এ ব্যাখ্যা সত্ত্বেও বিরোধী রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের সদস্যরা সিদ্ধান্তটির তীব্র নিন্দা করেছেন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে যাদের কোনো আয় নেই সেই দিন মজুরদের কাছে  ট্রেন ভাড়া চাওয়ার সিদ্ধান্ত ‘অত্যন্ত অমানবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

মদের দোকান খুলতেই হুলস্থূল : ভারতে করোনাভাইরাস ঠেকাতে লকডাউনে অনেকদিন বন্ধ থাকার পর রাজধানী দিল্লিতে মদের  দোকান খোলামাত্রই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ায় বাধ্য হয়েই ফের বন্ধ করে দিতে হয়েছে অনেক দোকান। গতকাল মদের দোকান খোলার পরই সকালের দিকে সামাজিক দূরত্ব বিধি উপেক্ষা করে মানুষ মদ কিনতে ভিড় জমায়। দোকানের সামনে ভিড় সরাতে পুলিশকে মৃদু লাঠিচার্জও করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। লাইনে থাকা সবাই মুখে মাস্ক পরে থাকলেও দূরত্ব রক্ষা করেনি কেউ। পরে পুলিশ ধাওয়া করে  লোকজনকে সেখান থেকে হটিয়ে দেয়। দেশটিতে গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আরও ১৪ দিনের জন্য লকডাউন বাড়ানো হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, সংক্রামক এলাকা ছাড়া  দেশজুড়ে অন্যান্য এলাকাগুলোতে মদের দোকান চালু করা যাবে। তবে শহরের মার্কেটগুলোতে এবং শপিং কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত মদের দোকান খোলার অনুমতি দেয়নি সরকার। সেই সঙ্গে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছিল,  যেসব মদের দোকান চালু হচ্ছে সেগুলো থেকে  ক্রেতারা ৬ ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে মদ কিনতে পারবেন। তাছাড়া, একটি দোকানে একবারে পাঁচজনের বেশি ঢুকতে পারবেন না এবং  মাস্ক না পরে এলে কাউকে মদ বিক্রি করা হবে না।         -বিবিসি, এনডিটিভি

সর্বশেষ খবর