বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

লকডাউন শিথিলের পথে বিশ্ব

মাস্ক পরা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশগুলো বহাল থাকছে

লকডাউন শিথিলের পথে বিশ্ব

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃত্যু আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশিরভাগ দেশই এখন লকডাউন শিথিলের পথে হাঁটছে। আক্রান্ত-মৃত্যু সংখ্যায় উপরের দিকে থাকা দেশের মধ্যে ইতালি, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যও সোমবার থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর দেওয়া বিধিনিষেধ শিথিল করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

অবশ্য লকডাউন শিথিল হলেও মাস্ক পরা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনাগুলো বহালই থাকছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস প্রতিরোধে সম্ভাব্য টিকা কিংবা ওষুধ উদ্ভাবনে বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্বনেতারা ৮০০ কোটি ডলারের একটি তহবিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্বের কোনো দেশ এ উদ্যোগের বাইরে থাকবে না বলে অনেকে আশা করলেও, যুক্তরাষ্ট্র এ তহবিলে কোনো ধরনের সহায়তা করছে না। নতুন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ এ যে কয়েকটি দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখা গেছে, তাদের অন্যতম ইতালি দুই মাস ধরে ঘরবন্দী প্রায় ৪৫ লাখ মানুষকে কাজে ফেরার অনুমতি দিয়েছে। নতুন নির্দেশনায় দেশটিতে নির্মাণ কাজ শুরু ও আত্মীয়-স্বজনরা একত্রিত হতে পারছে। ‘আমি আজ ঘুম থেকে উঠেছি ভোর সাড়ে ৫টায়। খুবই উদ্দীপ্ত ছিলাম,’ বলেছেন তিন বছর বয়সী নাতিকে রোমের ভিয়া বোর্হেস পার্কে হাঁটতে নিয়ে আসা মারিও অ্যান্তোনিয়েতা গালুজ্জো। লকডাউনের কারণে দাদি-নাতির দেখা হয়েছে আট সপ্তাহ পর। নতুন এ করোনোভাইরাসের আঘাতে এখন পর্যন্ত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখা যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও এবং অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা ঘোরাতে বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। দেশটিতে এরই মধ্যে কভিড-১৯ এ জ্ঞাত আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ পেরিয়ে গেছে, মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৬৯ হাজার। য্ক্তুরাষ্ট্র সরকারের অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে দেশটিতে জুন পর্যন্ত প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে মে মাসের শেষ দিকে প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে; রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, কভিড-১৯ দেশটিতে এখন প্রতিদিন দুই হাজার করে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। 

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা প্রায়ই যে গবেষণা মডেলের কথা উল্লেখ করেন, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সেই মডেলের মূল্যায়নেই ৪ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যু এক লাখ ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এ সংখ্যা আগের ধারণার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, ‘এটা হোয়াইট হাউসের নথি নয়। এটি করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের কাছে উপস্থাপন কিংবা এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে খতিয়েও দেখা হয়নি।’ এ পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গরাজ্য নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো অর্থনীতি সচলে তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নির্মাণ খাতসহ বেশ কিছু শিল্প কারখানা পুনরায় চালু করতে পর্যায়ক্রমিক রূপরেখা হাজির করেছেন। স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইসরায়েল ও লেবাননসহ বিশ্বের অনেক দেশ এরই মধ্যে লকডাউন শিথিল করে কারখানা, নির্মাণ কাজ, পার্ক, সেলুন ও লাইব্রেরি চালুর অনুমতি দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন ২-৩% করে বাড়ছে; এই হার মার্চের মাঝামাঝির তুলনায় অনেক কম। সেসময় প্রতিদিন ১৩ শতাংশ বলে বেড়েছিল। মৃদু উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের বাদ দিয়েই বিশ্বজুড়ে এখন কভিড-১৯ এ জ্ঞাত রোগীর সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ৩৫ লাখ। নতুন করোনাভাইরাসে ২৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু দেখা দেশ ইতালিতে এখনো গড়ে প্রতিদিন এক হাজার আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে।  দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্তে কন্তে বলেছেন, তার দেশ এখনো মহামারীর প্রসবযন্ত্রণার মধ্যেই আছে। ইতালির পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, কভিড-১৯ এ মোট মৃত্যুর পাশাপাশি নতুন করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা ছাড়া কিংবা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর তুমুল চাপের কারণে অন্য রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে পারেননি, এমন আরও অন্তত ১১ হাজার ৬০০ জনের মৃত্যু হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।  দেশটিতে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল হলেও বন্ধুবান্ধবদের মেলামেশা এবং অধিকাংশ দোকানই ১৮ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকছে। স্কুল, সিনেমা ও থিয়েটার বন্ধ থাকছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। অর্থনীতি ফের সচলে স্পেনেও সেলুন, লন্ড্রিসহ বিভিন্ন দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে গণপরিবহনে মাস্ক বাধ্যতামূলক হওয়ায় রেড ক্রসের কর্মীদের মাদ্রিদের মেট্রো স্টেশনগুলোতে মাস্ক বিলি করতে দেখা গেছে।

সর্বশেষ খবর