শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন ঠাণ্ডাযুদ্ধে চীন-যুক্তরাষ্ট্র

নতুন ঠাণ্ডাযুদ্ধে চীন-যুক্তরাষ্ট্র

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে অবনতি হয়েছে নাটকীয়ভাবে। দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকরাই স্বীকার করছেন যে, গত ৪০ বছরের বেশি সময় পর দুই দেশের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে নেমেছে। এমন পরিস্থিতিকে অনেকে বলছেন, ‘নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ’।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের ওপর ব্যাপক কূটনৈতিক চাপ তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওসহ দেশটির অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা এই তত্ত্ব প্রচার করছেন যে, করোনাভাইরাস চীনের উহানের ল্যাবে তৈরি। সেখান থেকেই এটি ছড়িয়েছে।

তারও আগে থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য চীনকে দায়ী করতে শুরু করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি ভাইরাসটিকে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ বলেও উল্লেখ করতে শুরু করেন। এরপর তিনি গত জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে করা বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপ বাতিলের হুমকি দেন। করোনাভাইরাসের ‘তথ্য গোপনের’ অভিযোগে চীনের পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপেরও হুমকি দেন ট্রাম্প।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে উৎপাদিত পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় একটি বড় ‘ধাক্কা’ দিতে ‘বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর’ প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য গোপন করেছিল চীন। তবে বেইজিং ঠিকই ভাইরাসটির ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পেরেছিল। এ জন্য গত জানুয়ারি থেকে চিকিৎসা সামগ্রীর রপ্তানি কমিয়ে তা মজুত করতে শুরু করে চীন।’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পরই ‘বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর’ প্রতি ওই আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।  চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমও চুপ করে বসে নেই। দেশটির কূটনীতিকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ রাজনীতিকদের ওপর নানা ‘আক্রমণ’ অব্যাহত রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস মোকাবিলার পদ্ধতি নিয়ে গত সপ্তাহে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম সিনহুয়া একটি ব্যঙ্গ ভিডিও তৈরি করে। আর সেটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে মূল ভূমিকা রাখে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও দেশটির স্টেট কাউন্সিলের উপদেষ্টা শি যিনহং সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ‘চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র আসলে নতুন ঠান্ডাযুদ্ধের যুগে প্রবেশ করেছে’। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়নের ঠান্ডাযুদ্ধের চেয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঠান্ডাযুদ্ধ অনেক দিক দিয়েই ভিন্ন। ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্ক এখন আর কয়েক বছর আগের মতো নেই। এমনকি কয়েক মাস আগের মতোও নেই’।

‘ঠান্ডাযুদ্ধ’র রাজনৈতিক ধারণা যুক্তরাষ্ট্রে বহুল ব্যবহৃত। চীনে এর ব্যবহার তেমন একটা হয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেইজিংয়েও।

গত সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স চীন সরকারের একটি গোপন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালের তিয়েন আনমেন স্কয়ারের ঘটনার পর প্রথমবারের মতো ২০২০ সালে এসে বিশ্বে ফের চীনবিরোধী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

১৯৮৯ সালে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েন আনমেন স্কয়ারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকে নির্মম কায়দায় দমন করা হয়েছিল। এর পরই সেই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত পশ্চিমা দেশগুলোতে। ২০২০ সালে এসে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে অনেকটা একই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর দাবি, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য গোপন করেছিল। এ ছাড়া ভাইরাসটি কীভাবে ছড়িয়েছে তা নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিও তুলেছে দেশগুলো।

আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।

এদিকে করোনাভাইরাস উহানের ল্যাবে তৈরি বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর অভিযোগকে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানদের রাজনৈতিক কৌশল বলে মন্তব্য করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং গতকাল নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর