শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

গত ডিসেম্বরেই ছড়িয়েছে করোনা!

টিকা আবিষ্কার পর্যন্ত ভাইরাসের সঙ্গেই থাকতে হবে : মার্কিন বিশেষজ্ঞ

গত ডিসেম্বরেই ছড়িয়েছে করোনা!

চীনে উৎপত্তি হওয়ার পর নতুন করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে। বিস্তার দ্রুত ঘটলেও শুরুতে কোনো দেশই বিষয়টি আঁচ করতে পারেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাড়ে সাত হাজারের বেশি কভিড-১৯ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে জিনগত বিশ্লেষণের পর যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী বুধবার এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিকস ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় নতুন করোনাভাইরাস সার্স-কোভ-২ উৎপত্তি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ বার জিনগত রূপান্তর ঘটিয়েছে বলে দেখতে পেয়েছেন। পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটি কীভাবে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে সেটিও গবেষকদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।

জিনগত বিশ্লেষণের পর বিজ্ঞানীদের ধারণা, গত বছরের ৬ অক্টোবর থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যকার কোনো এক সময়ে কভিড-১৯ মহামারী শুরু হয়েছে। মানবদেহে ভাইরাসটি সংক্রমিত হওয়ার পর নমুনা পরীক্ষায় ওই সময়ের ইঙ্গিত মিলছে। ইনফেকশন, জেনেটিকস অ্যান্ড ইভলিউশন সাময়িকীতে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের এ গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক দলের সহকারী প্রধান ফ্রান্সিওস ব্যালোক্স বলেন, এ ভাইরাসটির রূপান্তর ঘটেছে অন্যান্য ভাইরাসের রূপান্তরের মতোই। কভিড-১৯ ভাইরাসটির বৈশ্বিক জিনগত রূপান্তরের বড় একটি অংশ পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নেওয়া নমুনায় রূপান্তরে মিল পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে কভিড-১৯ মহামারী শুরুর আগেই বিশ্বজুড়েই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। যে কারণে আমরা সার্স-কোভ-২ মারাত্মক প্রাণঘাতী এবং সংক্রামক হয়ে উঠছে কিনা তা এখনই বলতে পারছি না।

ব্রিটিশ এ বিজ্ঞানী বলেন, সব ভাইরাসই রূপান্তরিত হয়। ভাইরাসের রূপান্তর খারাপ কিছু নয়। তবে সার্স-কোভ-২ প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত কিংবা ধীরে রূপান্তরিত হয়েছে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। বুধবার করোনাভাইরাস নিয়ে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর বিজ্ঞানীদের অপর একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে আগের এক গবেষণায় করোনাভাইরাস পৃথক দুটি ধরনে রূপ নিয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছিল সেটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. টম ফ্রাইডেন বলেছেন, ‘কোনো টিকা বা কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত করোনাভাইরাস আমাদের সঙ্গেই থাকবে। সেটি হতে পারে আগামী কয়েক মাস বা কয়েক বছর।’ স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের বরাদ্দ বিষয়ক কমিটির শুনানিতে অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি। নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ‘দীর্ঘ ও কঠিন’ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. ফ্রাইডেন বলেন, মহামারী কেবল শুরু হয়েছে। এই মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রথম উপায় হলো প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার আওতায় আনা। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ডা. ফ্রাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) পরিচালক ছিলেন। ২০১৪ সালে আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন ডা. ফ্রাইডেন।

বুধবার কমিটির শুনানিতে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এতদূর খারাপ হওয়ার পরও আমরা এখনো মহামারীর একেবারে শুরুর দিকে রয়েছি।’ একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সংখ্যা ১২ লাখ। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭৪ হাজারের বেশি মানুষের। এখনো যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মে মাসের শেষ নাগাদ মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ডা. ফ্রাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে কিছু কিছু অর্থনৈতিক কর্মকা- শুরু হয়ে গেছে। ডা. ফ্রাইডেনও স্বীকার করেছেন যে, মানুষ কাজে ফিরতে আগ্রহী। তবে সাধারণ মানুষকে সতর্ক হয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বলেছেন, বিপুলসংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা, আক্রান্তদের শনাক্ত ও জনস্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা না বাড়াতে পারলে আরও গভীর সংকটে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। কংগ্রেসে ইতিমধ্যে পরবর্তী পর্যায়ের তহবিল ছাড়ের বিষয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতেই এ তহবিল। তবে সেটি ছাড়ের পদ্ধতি কী হবে সে ব্যাপারে ডেমোক্র্যাট ও ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা একমত হতে পারছেন না এখনো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর