শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

উত্তেজনা বাড়ছে চীন-ভারত সীমান্তে

আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের

উত্তেজনা বাড়ছে চীন-ভারত সীমান্তে

বৃহত্তর কাশ্মীর অঞ্চলে ভারতশাসিত লাদাখের সীমানা এলাকায় প্রতিবেশী ভারত ও চীনের মধ্যকার বিদ্যমান উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে লাদাখের সীমানা ঘেঁষে চীন তার সেনা ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে বলে খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে এ উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। তবে সীমান্তে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে জানিয়েছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র। এ ছাড়া দিল্লিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতও জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। উ™ভূত পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে দেশটির সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। এদিকে, লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা আগ বাড়িয়েই মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সম্প্রতি লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাকে (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল) কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চীন সেখানে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের পানিসীমা ও আকাশসীমা লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠছে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় লাদাখ ও উত্তর সিকিমে দুই দেশই সেনা ও সমরাস্ত্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়েছে বলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। লাদাখ সীমান্তের কাছে চীনের সামরিক ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান নিয়ে আসার ঘটনাতেও উদ্বেগ বেড়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, লাদাখের কাছে বিমানঘাঁটিও তৈরি করেছে চীন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কমান্ডারদের নিয়ে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভাদৌরিয়া বলেছেন, ‘চীনা হেলিকপ্টারের আনাগোনা লাদাখে ক্রমেই বাড়ছে।’ পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে লাদাখের গালওয়ান অঞ্চলে সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে সেখানকার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়।

লাদাখ সীমান্তে ভারত সেনা সমাবেশ বাড়ানোর পরপরই সুর নরম করে চীন শান্তির পতাকা ওড়াতে চাচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম কলকাতাভিত্তিক দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন। দৈনিকটির এক প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, ভারত ও চীনের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ দুটি দেশ পরস্পরের জন্য বিপজ্জনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সান ওয়েইডং।

বিক্ষিপ্তভাবে দেশ দুটির মধ্যে যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে তা যেন দুই দেশের মধ্যে সার্বিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব না ফেলে, সেটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে’ বলেও চীনা রাষ্ট্রদূতের বরাতে খবরে বলা হয়েছে। এছাড়া চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিচিয়ান এক বিবৃতিতে বলেছেন, সীমান্তে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চীন সুর নরম করলেও ভারত এখনো শক্ত অবস্থানেই রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন বলেও খবরে বলা হয়েছে।

এদিকে, চীন ও ভারতের মধ্যকার বিদ্যমান উত্তেজনায় দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়ার একদিনের মাথায় বুধবার এ প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প। টুইটারে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভারত ও চীন দুই দেশকেই জানিয়েছি যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যেকার ক্রমবর্ধমান সীমান্ত বিরোধে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত, ইচ্ছুক ও সক্ষম। আপনাদের ধন্যবাদ!’ দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যে দৃশ্যত আগ বাড়িয়ে এ মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে দফায় দফায় কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই প্রস্তাব দিল্লি প্রত্যাখ্যান করলেও চীনের সঙ্গে মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি ভারত।

অপরদিকে, লাদাখ সীমান্তের ওপারে চীন ক্রমেই শক্তি বাড়িয়ে চলেছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন। স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত চিত্রের বরাতে এ খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

সর্বশেষ খবর